সরবরাহ খাতের সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ

উদীয়মান ৫০টি দেশের সরবরাহ খাত নিয়ে একটি সূচক তৈরি করেছে বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহ পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাজিলিটি লজিস্টিকস। এতে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে ৩৯তম অবস্থানে আছে। এই তালিকার শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে চীন, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এমনকি এশিয়ার অপর দুই দেশ পাকিস্তান (২৭) ও শ্রীলঙ্কার (৩৩) চেয়েও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে ‘বাংলাদেশের সরবরাহ খাত: সুযোগ ও উদ্বেগ’ শীর্ষক এক নীতিসংলাপের আয়োজন করে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম)। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফা) সভাপতি কবির আহমেদ, বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির (বিএসসিএমএস) সভাপতি নকিব খান, অ্যামচেম সহসভাপতি ও মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।

নীতিসংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অধ্যাপক মো. মামুন হাবীব। তিনি বলেন, অ্যাজিলিটি সরবরাহ সূচকের চারটি আলাদা উপসূচকেও বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সরবরাহব্যবস্থার সক্ষমতায় ২০তম অবস্থানে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ সক্ষমতায় ৪১তম অবস্থানে, সরবরাহ ব্যবসার মৌল ভিত্তির উপসূচকে ৪৪তম অবস্থানে ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় ৩৪তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

মামুন হাবীব বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশে গতিশীল সরবরাহ (লজিস্টিক) খাত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সরবরাহ খাত উন্নত হলে বন্দরগুলোয় পণ্যজট কমার পাশপাশি বৈশ্বিক বাজারে বাণিজ্যের পরিমাণ ও রপ্তানিবৈচিত্র্য বাড়বে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আগ্রহী হবে এ দেশে বিনিয়োগ করতে।

কিন্তু সরবরাহ খাত নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে বলে জানান মামুন হাবীব। তিনি বলেন, বর্তমানে ৯টি মন্ত্রণালয় ও ২০টি সরকারি সংস্থা সরবরাহ খাতের নীতি ও পরিষেবা নিয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া সরবরাহ খাত নিয়ে জাতীয় নীতিমালা নেই। এ কারণে এই খাতে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। এ জন্য তিনি সরবরাহ খাতে নিয়মিত তদারকি বাড়ানো, সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের তাগিদ দেন। পাশাপাশি বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরের কাছাকাছি জায়গায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত সরবরাহ পরিষেবা ও হিমাগার–সুবিধা চালু করার পরামর্শ দেন।

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা বলেন, অবকাঠামোগত সুবিধা ও পরিষেবার গুণমান উভয় দিক দিয়েই বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে পণ্যবাহী ট্রাকে পরিবহন খরচ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যয় ১৫ শতাংশ কমানো গেলে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রপ্তানি আয় বাড়তে পারে।