সার্ক ফুড ব্যাংক ও বীজ ব্যাংককে শক্তিশালী করুন: শ্রীলঙ্কার গভর্নর

‘নতুন পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ও বৈশ্বিক মাত্রায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার পুনর্বিন্যাস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এই সম্মেলনের আয়োজক। শনিবার একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

প্রাকৃতিক দুর্যোগের এলাকা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এ অঞ্চলের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ। তাঁদের বিরাট অংশ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। অবকাঠামোও ধ্বংস হয়েছে অনেক। এমন বাস্তবতায় টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা।

এসব কথা উল্লেখ করে শ্রীলঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিংহ বলেছেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতাই পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অস্থির খাদ্যমূল্য কমিয়ে রাখা এবং চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে থাকা ঘাটতি পূরণের জন্য উৎপাদনব্যবস্থাকে শৃঙ্খলায় রাখতে।

‘নতুন পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ও বৈশ্বিক মাত্রায় দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার পুনর্বিন্যাস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন পি নন্দলাল বীরসংহ। এটি ১৪তম দক্ষিণ এশিয়া অর্থনৈতিক সম্মেলন (এসএইএস)। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ঢাকার একটি হোটেলে আজ শনিবার এ সম্মেলন শুরু হয়, শেষ হবে আগামীকাল রোববার। সিপিডি প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থাটির ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের একটি এ সম্মেলন।

সম্মেলনের সহ–আয়োজক ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজ অব শ্রীলঙ্কা (আইপিএস), ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস), নেপালের সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিকস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (এসএডব্লিউটিইই) এবং পাকিস্তানের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট পলিসি ইনস্টিটিউট (এসডিপিআই)।

সার্কের আওতায় থাকা বিদ্যমান আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার বলে মনে করেন গভর্নর পি নন্দলাল বীরসিংহ। তিনি বলেন, এ জন্য সার্ক বীজ ব্যাংক এবং সার্ক ফুড ব্যাংককে শক্তিশালী করা দরকার। তাঁর মতে, ভালো কৃষিচর্চা, কার্যকরভাবে জমি চাষ, ফসল উৎপাদন, বীজ উৎপাদন, পশুসম্পদ পালন এবং রোগ ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও সহযোগিতার দরকার।

সহযোগিতার উদাহরণ দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পাওয়া আর্থিক সহায়তায় শ্রীলঙ্কা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে। এ ধরনের আর্থিক সহায়তা শুধু যে স্বল্প মেয়াদে স্বস্তি দিয়েছে তা নয়, এটি দেশটির অবকাঠামোগত দুর্বলতা কাটাতে ও সামগ্রিক উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

মুদ্রা বিনিময় চুক্তির আওতায় দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল বাংলাদেশ। সংকট কাটার পর দেশটি তা পরিশোধ করে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এ অঞ্চলে সম্প্রতি যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছে, তা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের সতর্কবার্তা। আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তহবিল নির্ধারণ করা একটু কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। ফলে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

নন্দলাল বীরসিংহ বলেন, সার্ক প্রতিষ্ঠার পর গত তিন দশকে আলোচনাই করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সহযোগিতা ও সংযোগের দিক থেকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল পিছিয়ে আছে। এ অঞ্চলে রয়েছে বিশাল জনসংখ্যা। প্রাকৃতিক সম্পদ আছে ভালোই। ভৌগোলিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক শিকড় এখানে সবার মোটামুটি একই রকম। জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, প্রযুক্তিগত সমস্যা আছে। এগুলো দূর করে টেকসই প্রবৃদ্ধি তৈরি করা অপরিহার্য। আর এ কারণেই দরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।