আকার কমছে ১৮,৫০০ কোটি টাকা

সংশোধিত এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাতে এডিপির আকার কমে দাঁড়াবে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকায়।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। যথা সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারার পুরোনো ব্যর্থতা নিয়েই এই অর্থ এডিপি থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাতে সব মিলিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি। মূল এডিপির আকার হলো ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের গতকাল সোমবারের বর্ধিত সভায় সংশোধিত এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। আগামী ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন হতে পারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়ন কমছে না। এডিপিতে নিজস্ব অর্থায়নের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে বিদেশি সহায়তা থেকে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কম বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাতে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি সহায়তার পরিমাণ দাঁড়াবে সাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকায়। বর্তমানে এডিপিতে ১ হাজার ৩৬৩টি প্রকল্প আছে।

গত মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগ। সেখানে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশি প্রকল্প সহায়তা কমানোর পক্ষে মত দেন। কারণ, বিদেশি সহায়তার অর্থ খরচে নানা ধরনের শর্ত থাকে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো দেশজ উৎসের অর্থ খরচে বেশি আগ্রহী।

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া চাপ ও চলমান ডলার সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপির খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা ধরনের কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা জারি করা হয়। তারই অংশ হিসেবে প্রকল্পের গাড়ি কেনা; বিদেশে প্রশিক্ষণ বন্ধের পাশাপাশি গাড়ির জ্বালানি তেল ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার সীমিত করা হয়। সেই সঙ্গে অতি জরুরি না হলে নতুন প্রকল্প না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

অর্থনীতির চাপের কারণে চলতি অর্থবছরের তিন মাস পার হওয়ার পরই প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করেছে সরকার। এ ছাড়া অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা করা হয়। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করা হবে। ‘বি’ শ্রেণির প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। আর ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। বর্তমানে ৬৪৬টি প্রকল্প ‘এ’ শ্রেণিতে; ৬৩৬টি প্রকল্প ‘বি’ শ্রেণিতে এবং ৮১টি প্রকল্প ‘সি’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রাধিকার নির্ধারণের সময় বলা হয়েছিল, এতে প্রায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এর বাইরে নানা ধরনের কৃচ্ছ্রতাসাধনের কারণে আরও ১০-১৫ হাজার কোটি সাশ্রয় হবে বলে বলা হয়। সব মিলিয়ে এডিপির ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন এডিপি সংশোধনের সময় দেখা যাচ্ছে, এসব উদ্যোগ খুব বেশি কাজ করেনি। সংশোধিত এডিপিতে মাত্র সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।

ডলার–সংকটের এ সময়ে অর্থনীতিবিদেরা বিদেশি সহায়তার প্রকল্প বেশি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছিলেন। কারণ, এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দেশে ডলার সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু  এডিপিতে যে সংশোধন আনা হচ্ছে, সেখানে উল্টো বিদেশি সহায়তা কমানো হচ্ছে। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এবার সংশোধিত এডিপিতে দেশজ উৎস থেকে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকার চাহিদা দিয়েছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজার এবং স্থানীয় বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদারেরা প্রকল্পের কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন।

বিশেষ করে রড-সিমেন্ট, ইট-বালুর দাম বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট-ভবন নির্মাণ প্রকল্পে এমন ঘটনা বেশি ঘটেছে। আবার ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে বাড়তি দামে কাঁচামাল আনতে আগ্রহী হচ্ছেন না ঠিকাদারেরা। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম অগ্রাধিকারের প্রকল্পে টাকা বরাদ্দের চাহিদাও কম।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এডিপির মাত্র সাড়ে ২৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।