প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে টাস্কফোর্সের অন্তত ১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসফাইল ছবি: বাসস

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে টাস্কফোর্সের সুপারিশমালা থেকে অন্তত একটি করে সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কোন সুপারিশটি বাস্তবায়ন করা হবে তা উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী বৈঠকে জানাতে হবে।

আজ সোমবার বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। সেখানে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব তথ্য জানান।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলনকক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন টাস্কফোর্সের প্রধান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে অর্থনীতি, ব্যাংক, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরকারি সেবা নিশ্চিত করা এবং সংস্কারের অংশ হিসেবে পাঁচটি নতুন প্রতিষ্ঠান গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্স প্রতিবেদনে। যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার কমিশন বা রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন (আরআরসি) গঠন করা উচিত। আইনকানুন পরিবর্তন, সংশোধনে এই কমিশন সব সময় কাজ করবে। বাংলাদেশ বিমানকে দুই ভাগে বিভক্ত করে একটি অংশ বিদেশি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নিয়ে পরিচালনার সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রম তদারকির জন্য আলাদা কমিটি করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সেন্টার অব গ্লোবাল এক্সিলেন্স এবং সেন্টার সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিয়রাল চেঞ্জ কমিউনিকেশন অ্যান্ড রিসার্চ গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়, পুলিশ ও স্বাস্থ্যসহ যেকোনো সরকারি সেবা পাওয়া কঠিন। এ জন্য নাগরিকদের তদারকির মাধ্যমে এসব সেবাকে সামাজিক নিরীক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা।

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়, পুলিশ ও স্বাস্থ্যসহ যেকোনো সরকারি সেবা পাওয়া কঠিন। এ জন্য নাগরিকদের তদারকির মাধ্যমে এসব সেবাকে সামাজিক নিরীক্ষার আওতায় আনা যেতে পারে।

কে এ এস মুরশিদ বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে চাঁদাবাজির কথা শুনছি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। আমরা মনে করি, স্থানীয় জনগণের সহায়তায় অ্যান্টি গুন স্কোয়াড (গুন্ডা প্রতিরোধ কমিটি) বেশ কার্যকর হবে।’

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার সুপারিশ প্রসঙ্গে কে এ এস মুরশিদ বলেন, রাজনীতির প্রভাব ছাত্রদের মধ্যে বিস্তার লাভ করে, শিক্ষকেরাও জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তা আর্থিক দুর্নীতিতে গড়ায়। দলীয় রাজনীতি কেন থাকবে? কোনো সভ্য দেশে আছে? ছাত্র-ছাত্রীরা সক্রিয় থাকেন সামাজিক ও শিক্ষা খাতের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করতে পারে। এখন তো বলা যায়, আগে তো এটাও বলা যেত না।

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের বাধাগুলো দূর করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আগের সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কথা বলেছিল। তার সবগুলো না করে নির্বাচিত কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল করা যেতে পারে।

ব্যাংক দেউলিয়া আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এমডি সৈয়দ নাসির মঞ্জুর। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার আগে স্থানীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিগত সরকারের আমলে ব্যাংক কোম্পানি আইন দুর্বল হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ কে এম ফাহিম মাশরুর প্রমুখ।

গত ১১ সেপ্টেম্বর বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ টাস্কফোর্স গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদের নেতৃত্বে গঠন করা হয় এই টাস্কফোর্স।