ডলারের বাজারে তদারকি বাড়াবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  • গতকাল ঢাকায় খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা।

  • বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো  প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম দিচ্ছে ১২২-১২৩ টাকা।

ডলার
ছবি: সংগৃহীত

ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম আর বাড়াতে রাজি নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ব্যাংকারদের দুই সংগঠন এবিবি ও বাফেদা ঘোষিত ডলারের দাম যথাযথভাবে মেনে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে কি না, তা জানতে কঠোর তদারকি শুরু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেসব ব্যাংক বেশি প্রবাসী আয় আনবে ও যাদের ডলার উদ্বৃত্ত থাকবে, সেসব ব্যাংককে তাদের হাতে থাকা ১০ শতাংশ ডলার অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। 

জাতীয় নির্বাচনের আগে আপাতত এভাবেই ডলার বাজার পরিচালনা করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শীর্ষস্থানীয় ১৫ ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভা হয়। ওই সভায় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কোনো ব্যাংক এবিবি ও বাফেদার বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে না।

জানা যায়, প্রবাসী আয় বিক্রি করতে বিদেশি এক্সচেঞ্জ ও রেমিট্যান্স হাউসগুলো এখন প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা পর্যন্ত হাঁকছে। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস স্মল ওয়ার্ল্ড গতকাল ১২২ টাকা ৭১ পয়সা দামে বিদেশে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছে। এর চেয়ে কিছু বেশি দামে তা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। সাধারণত বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো তাদের কেনা দামের চেয়ে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা বেশি দামে তা বিক্রি করে থাকে। ফলে প্রবাসী আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের দাম দাঁড়াচ্ছে ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা পর্যন্ত। এ দামেই স্মল ওয়ার্ল্ডের কাছ থেকে এসব প্রবাসী আয় প্রতিযোগিতা করে কিনছে দেশের ব্যাংকগুলো। 

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকারদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) নেতারা গত বুধবার এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয় প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম না বাড়ানোর। এবিবি ও বাফেদা জানায়, প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম হবে আগের মতো সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এর বাইরে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি কোনো ব্যাংক চাইলে নিজেও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিতে পারবে। আর আমদানিতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১১ টাকা।

যদিও বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর অনেকে  প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম দিচ্ছে ১২২-১২৩ টাকা। এ অবস্থায় ডলারের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সভায় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। 

সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে এখন আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই সমস্যা সমাধানে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। আমাদের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক চাইলে প্রবাসী আয় ডলারের সর্বোচ্চ দাম দিতে পারবে প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা। তবে ব্যাংকগুলো ১১১ টাকার বেশি দামে ডলার বিক্রি করতে পারবে না।’

গতকালের সভায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাফেদা যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা সব ব্যাংক যথাযথভাবে অনুসরণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে নিয়মিত ডলার কেনাবেচা তদারকি করবে।

এদিকে খোলাবাজারেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। গতকাল ঢাকায় খোলা বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৬ টাকা ৫০ পয়সা। এর আগে খোলাবাজারে কখনো এত বেশি দামে ডলার বিক্রি হয়নি।