মাঠে মণে বেড়েছে ৬০ টাকা, বাজারে কেজিতে ৪ টাকা 

২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে লবণ বিক্রি করেছেন কক্সবাজারের চাষিরা। গত বছর প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দামে বিক্রি হয়।

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার লেমশিখালী উপকূলের মাঠে কালো পলিথিন বিছিয়ে সমুদ্রের লোনা পানি শুকিয়ে উৎপাদিত হচ্ছে লবণ
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় বর্তমানে প্রতি মণ অপরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। ৭ দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। বাড়তি দামে লবণ বিক্রি করতে পেরে খুশি চাষিরা। এদিকে বাজারে প্যাকেটজাত লবণের দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। 

কক্সবাজারের লবণচাষিরা জানান, গত বছর মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ লবণ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। গত ২০ বছরে জেলার কোনো চাষি ৫৫০ টাকায় লবণ বিক্রির সুযোগ পাননি। চাষিরা জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন তাঁরা। 

গতকাল সোমবার দুপুরে কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত সাত হাজার জমিতে লবণের বাম্পার উৎপাদন চলছে। ব্যবসায়ীরা মাঠের লবণ কিনে কার্গো বোঝাই করে নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রামে সরবরাহ দিচ্ছেন। 

উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মিয়াঘোনা এলাকায় পাঁচ একর জমিতে লবণ চাষ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন। ২ নভেম্বর থেকে ৫ একর জমিতে তিনি লবণ উৎপাদন শুরু করেন। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমের ৫ মাসে ৪০ হাজার মণ লবণ উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। 

হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার পর্যন্ত ৩৯ দিনে নিজের মাঠে উৎপাদিত ১২২ মণ লবণ বিক্রি করেছেন। তাতে পেয়েছেন ৬৪ হাজার টাকা। আরও ১৩০ মণ লবণ গুদামে মজুত আছে। প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেন ৫২০ টাকায়। 

বড়ঘোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, দাম বাড়ায় লবণ উৎপাদনে উৎসাহিত হচ্ছেন চাষিরা। লবণ আমদানি বন্ধ রাখলে চাষিরা চাষে উৎসাহিত হবেন।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর-১৫ এপ্রিল) পাঁচ মাস জেলার টেকনাফ, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় ৬৬ হাজার ২৯১ একর জমিতে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। 

বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, গত মৌসুমে কক্সবাজারের ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। গতবার লবণ উৎপাদিত হয়েছিল ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন। 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে জানিয়েছেন বিসিক কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘গত মৌসুমের ঘাটতি মেটাতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে এবার আর আমদানির প্রয়োজন নেই। ইতিমধ্যে মাঠে উৎপাদিত লবণ বাজারজাত শুরু হয়েছে।’

এবার মৌসুম শুরুর ১৫ দিন আগেই চাষিরা মাঠে নেমেছেন। আর লবণ উৎপাদন হচ্ছে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে। সনাতন পদ্ধতির তুলনায় পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন আড়াই গুণ বেশি হয়। গুণমানও ভালো হয়। এ কারণে দাম বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। 

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণের দাম বেশি পাওয়ায় অন্য পেশা ছেড়ে অনেকে লবণ চাষে ঝুঁকছেন। 

ব্যবসায়ীরা জানান, বছরে দেশে আয়োডিনযুক্ত; অর্থাৎ খাওয়ার লবণের চাহিদা প্রায় ৯ লাখ টন। কাঁচামালের দামের প্রভাবে বাজারে আয়োডিনযুক্ত পরিশোধিত এই লবণের দাম বেড়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত লবণ প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা। 

জানতে চাইলে কনফিডেন্স সল্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মারুফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কাঁচামালের দাম বাড়তি। তাতে দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৩০০-এর বেশি লবণ মিল রয়েছে। তার মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তির মিল আছে ৫টি। এগুলো হলো এসিআই, মোল্লা, ফ্রেশ, কনফিডেন্স ও এসএ সল্ট। মিলগুলোর অধিকাংশই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায়।