মূল্যস্ফীতি
প্রতীকী ছবি

সাধারণ মানুষের জন্য দুঃসংবাদ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। এর কারণ হিসেবে তিনি পবিত্র রমজান মাসে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ‘মঙ্গা’র সময়ের কথা উল্লেখ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সাংবাদিকদের পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি আমরা লুকাই না। টানা কয়েক মাস কমার পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে এই সময়টা মঙ্গার সময়। কার্তিক ও চৈত্র—এই দুটি আমাদের জন্য ভয়ংকর। আমাদের ঘরের খাবার ফুরিয়ে যায়। খাবারে টান পড়ে। তাই মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে। আমি ঝুঁকি নিয়ে বলতে পারি, বৈশাখ মাসে মূল্যস্ফীতি কমবে। মাঠে এখন বোরো ধান আছে। তবে বৃষ্টি বেশি হলে ভয়ংকর অবস্থা হতে পারে। বৃষ্টি যেন আর না হয়।’

কার্তিক ও চৈত্র—এই দুটি আমাদের জন্য ভয়ংকর। আমাদের ঘরের খাবার ফুরিয়ে যায়। খাবারে টান পড়ে। তাই মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়েছে।
এম এ মান্নান, পরিকল্পনামন্ত্রী

রোজার কারণে মূল্যস্ফীতি কীভাবে বাড়ে, তা ব্যাখ্যা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোজার সময় অভ্যাসবশত বাড়তি পণ্য কিনে রাখি। আমার স্ত্রীও তেল জমিয়ে রাখেন।’ তিনি বলেন, ‘রমজান সংযমের মাস। দুর্ভাগ্যবশত এই মাসে আমাদের মা-চাচিরা মজুতদার হয়ে যান। ১০ কেজি পেঁয়াজ, ৫ কেজি চিনি, ১০ লিটার তেল—এসব বাড়তি কিনে রাখেন। চার কোটি পরিবারের মধ্যে যদি এক কোটি পরিবার এই কাজ করে, তাহলে বাজারে পণ্যের স্বল্পতা দেখা দেয়। ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নেন।’

তবে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে, এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। আমার ব্যক্তিগত মত হলো পুলিশ দিয়ে নজরদারি করে নয়, সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, গত বছরের আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সেটি ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি কমেছে। জানুয়ারিতে তা কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অর্থনীতিতে টানাপোড়েন আছে

সার্বিকভাবে অর্থনীতি ভালো আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে টানাপোড়েন আছে। অন্য দেশের প্রভাবে এ দেশেও কাঁপন ধরে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘লন্ডনে আলু-টমেটো “রেশনিং” করা হচ্ছে। আপনি চাইলেই এক কেজি কিনতে পারবেন না। চারটি আলু পাবেন। আমরা অনেক ভালো আছি।’

‘রিজার্ভ, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় ভালো থাকলে আমাদের আর ভয় নেই’ বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

স্বাধীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় উন্নয়ন প্রকল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিগগির জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, দেশজ অর্থায়নের প্রকল্পে দেশীয় সংযোজন কোম্পানি প্রগতির গাড়ি কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পুলিশের একটি প্রকল্পে জাপান সরকার ৩৭টি গাড়ি অনুদান দেয়। সেই গাড়ি খালাস করতে বাড়তি ২৩০ কোটি টাকা জোগান দিতে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। তখন প্রশ্ন করা হয়, অনুদানের গাড়ি নিতে এত বিশাল খরচ, এটা প্রকল্প প্রণয়নে অদূরদর্শিতা কি না। এর উত্তরে পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, এই বিষয়ে পুরোপুরি একমত। প্রকল্পটি পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুদান নেওয়ার সময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

একনেকে ৯ প্রকল্প পাস

গতকাল একনেকে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকার ৯টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি (প্রথম সংশোধিত); ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১১২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ; পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের সমীক্ষা; বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়); দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু; দ্য প্রজেক্ট ফর দ্য ইমপ্রুভমেন্ট অব ইকুইপমেন্ট ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন; ঢাকা কারিগরি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন।