বিদেশি ঋণের তথ্য প্রকাশ করছে না ইআরডি

বিদেশি ঋণপ্রবাহের তথ্য প্রকাশে অনীহা দেখাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ছয় মাস ধরে মাসওয়ারি বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি, ছাড় ও পরিশোধের তথ্য প্রকাশ করেনি। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ইআরডির ওয়েবসাইটে এসব তথ্য দেওয়া আছে। এরপর আর বিদেশি ঋণের তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। আগে প্রতি মাসেই ওয়েবসাইটে আগের মাস পর্যন্ত ঋণের প্রতিশ্রুতি, ছাড় ও পরিশোধের তথ্য দেওয়া হতো।

ইআরডির বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (ফাবা) অনুবিভাগের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁরা বলেছেন, ইআরডির মুখপাত্র ছাড়া আর কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার এখতিয়ার রাখেন না। জানা গেছে, ইআরডিতে কোনো মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

তবে ইআরডির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরে ঋণের প্রতিশ্রুতি ও ছাড়—দুই কমে গেছে। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। বিদেশি ঋণের এমন চিত্র প্রকাশ করতে আগ্রহী হচ্ছে না ইআরডি। প্রথম আলো যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করেছে, তাঁদের কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘এত দিন ধরে বিদেশি ঋণের তথ্য মাসওয়ারি ভিত্তিতে প্রকাশ করা হচ্ছে না—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ে লুকোচুরি করা হতো। মূল্যস্ফীতি বাড়লে প্রকাশে বিলম্ব করা হতো। এখন বিদেশি ঋণ নিয়ে শুরু হলো।’

প্রথম আলোকে সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘বিদেশি ঋণের চাপ বাড়ছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সামষ্টিক অর্থনীতির বোঝার জন্য বিদেশি ঋণের তথ্য প্রকাশ করা উচিত। হয়তো ইআরডি নিজেদের কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রতিনিয়ত বিদেশি ঋণের তথ্য হালনাগাদ করছে।’

ইআরডি আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণপ্রবাহ প্রকাশ না করলেও জানা গেছে যে তারা গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) বিদেশি ঋণপ্রবাহের যাবতীয় তথ্য তৈরি করে রেখেছে। এসব তথ্য বিভাগের সমন্বয় সভায় উপস্থাপনও করা হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত ছিল—সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের তথ্য প্রকাশ করা।

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান, চীন, ভারতসহ উন্নয়ন সহযোগীরা সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে আগের পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ মাত্র ৮৮০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩৭ কোটি ডলার কম।

২০২১-২২ অর্থবছরটি ছিল বিদেশি সহায়তা পাওয়ার একটি বড় সাফল্যের বছর। ওই বছর রেকর্ড ১ হাজার ৯৭ কোটি ডলার বিদেশি সহায়তা ছাড় হয়। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদেশি সহায়তার অর্থছাড়ও ১৭০ কোটি ডলার কমে যায়। গত অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা সব মিলিয়ে ৯২৭ কোটি ডলার দিয়েছে।

এ ছাড়া গত অর্থবছরে বাংলাদেশকে ২৬৭ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা আগের বছরের পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় ৬৬ কোটি ডলার বেশি।