জরিপে বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে অসন্তুষ্টির পাঁচটি কারণ বলা হয়েছে। এগুলো হলো পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্ত দেওয়া হয় না; তথ্য–উপাত্ত পুরোনো; প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে না; আরও তথ্যের প্রয়োজন, তথ্যের উপস্থাপনা ব্যবহারযোগ্য নয়।  

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, উত্তরদাতাদের সবচেয়ে বেশি অসন্তুষ্ট জাতীয় আয় শাখার তথ্য–উপাত্ত নিয়ে। আলোচিত পাঁচটি অসন্তুষ্টির সব কটিতেই অর্ধেক উত্তরদাতা এই শাখার তথ্য–উপাত্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত পরিসংখ্যান তথা তথ্য–উপাত্ত নিয়ে অর্ধেক উত্তরদাতা সন্তুষ্ট নন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের তথ্য–উপাত্তেও একই অবস্থা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন বলেন, ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা অসন্তুষ্ট, তা নয়। তাঁরা আরও বেশি তথ্য চান।

জরিপ নিয়ে প্রশ্ন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিসিএস) এই জরিপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তাঁর প্রশ্ন, উত্তরদাতার সংখ্যা নির্বাচন নিয়ে। তিনি বলেন, ভুটানের মতো সাড়ে সাত লাখ জনগোষ্ঠীর দেশে এই ধরনের জরিপে উত্তরদাতার সংখ্যা ৯৬০। বাংলাদেশ সাড়ে ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ হয়েও উত্তরদাতা নেওয়া হয়েছে মাত্র ৬০৯ জন। এর ব্যাখ্যা আমরা কীভাবে দেব?

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপনার পরপরই প্রসঙ্গটি তোলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন তোলার প্রেক্ষাপটে বিবিএসের মহাপরিচালক মতিয়ার রহমানও বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন। মূল প্রশ্ন হলো, এই স্যাম্পল সাইজ পুরো জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে কি না। যদি পেশাভিত্তিক সংখ্যা পাওয়া যেত, তাহলে অংশগ্রহণভিত্তিক স্যাম্পল পাওয়া যেত। ভবিষ্যতে এসব ঠিকঠাক করে জরিপ করা হবে। প্রথমবার বলে ভুলত্রুটি রয়ে গেছে।’

বিবিএসের বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব ও মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়েই বেশি প্রশ্ন তোলেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বিবিএসের তথ্য–উপাত্ত সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য। কারণ, জিনিসপত্রের দরদাম নিয়ে বিবিএসের তথ্য–উপাত্তে ৪১ শতাংশ উত্তরদাতা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৫৯ শতাংশ। পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে বিবিএসের কর্মকর্তারা তা পাল্টে দিতেন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, সময়মতো তথ্য–উপাত্ত পাওয়া গেলে এর যথার্থতা থাকে। মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়। বিভিন্ন দেশে বিবিএসের মতো জাতীয় পরিসংখ্যান সৃষ্টিকারী সংস্থা সরকারের অধীন থাকে না; জাতীয় সংসদের অধীনে থাকে। এতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে জাতীয় পরিসংখ্যান সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আফরিন বলেন, ‘প্রথম সন্তুষ্টি জরিপ হিসেবে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। ভবিষ্যতে আরও ভালো জরিপ দিতে পারব। আমরা তথ্য–উপাত্ত ব্যবহারকারীদের সামনে নিজেদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছি। এখন আমরা জানতে পারছি, কোথায় উন্নতি করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দিপংকর রায়।