২০৫০ সালে বাংলাদেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠী দ্বিগুণের বেশি হবে: আইএলও

বাংলাদেশে বয়স্ক ও নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা এখনো কম হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও বয়স্ক ও নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০৫০ সালে দেশে বয়স্ক ও নির্ভরশীল মানুষের হার দ্বিগুণের বেশি হবে। তাই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভরণপোষণ করতে মানুষের আয় বৃদ্ধি জরুরি।

আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে, বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আইএলও মনে করে, বাংলাদেশ যদি উৎপাদনশীলতা ৪ দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়াতে পারে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কর্মসংস্থান ও সামাজিক পূর্বাভাস ২০২৪ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইএলও এসব তথ্য দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হবে। এই পরিবর্তনের কারণে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ফলে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে ওই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির হার কমতে পারে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে জনমিতির সুবিধা অনেকাংশে কমে যাবে।

জনমিতির সুবিধা; অর্থাৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমলেও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সম্ভব বলে মনে করে আইএলও। তারা মনে করছে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জোর ধারা অব্যাহত রাখা গেলে তা সম্ভব হবে।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উদীয়মান দেশগুলোর শ্রম উৎপাদনশীলতা কিছু কিছু ক্ষেত্রে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় এক-তৃতীয়াংশের কম। আইএলও বলছে, এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কতটা আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই ফল পেতে হলে কিছু কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে এবং সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এতে যেমন জাতীয় উৎপাদন বাড়বে, তেমনি বিপুলসংখ্যক শ্রমিক, যাঁরা আরও বেশি আয় করতে চান, তাঁরা সেই সুযোগ পাবেন।

আইএলওর সহকারী মহাপরিচালক ও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক চিহোকো আসাদা-মিয়াকাওয়া বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের বয়স বাড়ছে ঠিক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এই অঞ্চলে শ্রমিক পাওয়া যাবে না। যাঁরা শোভন কাজ খুঁজছেন, তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে তাঁরা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করতে পারবে। সেই দেশগুলো হলো চীন, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম। বলা হয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার শ্রম উৎপাদনশীলতা এখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, সে কারণে উচ্চ আয়ের দেশ হতে তাদের উৎপাদনশীলতা আর বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। তবে ভিয়েতনামের বিষয়টি অতটা মসৃণ নয়। উচ্চ আয়ের দেশ হতে গেলে তাদের বার্ষিক ৪ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আরও সাতটি দেশের বার্ষিক শ্রম উৎপাদনশীলতা ২ শতাংশীয় পয়েন্টের চেয়ে কম হারে বাড়াতে হবে, যদি তারা ২০৫০ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশ হতে চায়। এ ছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্ধেকের বেশি দেশের উৎপাদনশীলতা প্রতিবছর ২ শতাংশীয় পয়েন্ট হারে বাড়াতে হবে। অনেক দেশের ক্ষেত্রে এটা বাড়াতে হবে ৬ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি। এই হার অবশ্য অনেক বেশি। কারণ, চীনও গত এক দশকে এই হারে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারেনি।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দারিদ্র্য বিমোচনে অনেকটা সফলতা অর্জন করলেও কাজের মানের ক্ষেত্রে বিশেষ উন্নতি হয়নি। দেখা যায়, ২০২৩ সালে এই অঞ্চলের প্রতি তিনজন শ্রমিকের মধ্যে দুজন শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করতেন। এ ক্ষেত্রে গত এক দশকে মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে। স্বকর্মসংস্থান ও পারিবারিক কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা গত এক দশকে ৪২ শতাংশে আটকে আছে। এ ধরনের কাজে নিয়োজিত মানুষের বড় একটি অংশ এখনো নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত; অর্থাৎ আইএলওর মতে, শোভন কাজ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল অনেকটা পিছিয়ে। কর্মসংস্থান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অসমতা ও আয় অসমতা অনেক বেশি। বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের আয় এখনো বেশ কম।

এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক, নিয়োগদাতা ও সরকারের মধ্যে সংলাপ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে আইএলও।