যত বেশি বিনিয়োগ করা হবে, তত বেশি কর সংগ্রহ বাড়বে: সিপিডির গবেষণা

সিপিডির লোগো

কর আহরণে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে ডিজিটালাইজেশনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলে বাংলাদেশের কর সংগ্রহ যতটা বাড়তে পারে, আর কোনো উন্নয়নশীল দেশে তা এতটা বাড়বে না। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত কম। অনেক খাত থেকে এখনো কর সংগ্রহ করা হয় না; ফলে যত বেশি বিনিয়োগ করা হবে, তত বেশি হারে কর সংগ্রহ বাড়বে।

সিপিডি আরও দেখিয়েছে, কর আহরণে বাংলাদেশের ব্যয়ও অনেক দেশের তুলনায় কম। অর্থাৎ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর যে বিনিয়োগ করে, সেখান থেকে প্রাপ্তি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিপিডি দেখিয়েছে, বাংলাদেশে যেখানে প্রতি ১০০ টাকা কর আহরণে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ টাকা ব্যয় হয়, সেখানে ভারতে তার হার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ১ শতাংশ, জার্মানিতে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ আর জাপানে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ।

বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম। সে জন্য সরকারের ব্যয়ও কম। বাজেট ঘাটতিও জিডিপির ৫ শতাংশের আশপাশে থাকে। দেশে গত ১৫ বছরে জিডিপির আকার দ্বিগুণ হলেও কর-জিডিপির অনুপাত সে হারে বাড়েনি। সম্প্রতি আইসিএবির এক অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০০৯-১০ সালে দেশে জিডিপি-আয়করের অনুপাত ছিল ১ শতাংশ; এখন তা সামান্য বেড়ে ১ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতে বৈষম্য বেড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

আইসিএবির সেই অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, দেশের করব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ানো গেলে রাজস্ব আয় তিন গুণ বাড়ানো সম্ভব। সিপিডির সেই গবেষণায় আরও বলা হয়, ডিজিটালাইজেশন করা হলে দেশের কর ফাঁকির প্রবণতা কমানো সম্ভব।

বিভিন্ন বৈশ্বিক সূত্রের ভিত্তিতে করব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের কী প্রভাব পড়তে পারে, সিপিডি তা হিসাব করে দেখিয়েছে। তাদের হিসাব, ২৫ শতাংশ রিটার্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হলে প্রথম বছরে রাজস্ব আয় বাড়বে ৫৮০ কোটি ডলার; দ্বিতীয় বছরে বাড়বে ৬৫০ কোটি ডলার; তৃতীয় বছরে ৭২০ কোটি ডলার ও চতুর্থ বছরে বাড়বে ৭৮০ কোটি ডলার।

আরেক হিসাবে সিপিডি দেখিয়েছে, শতভাগ রিটার্ন ডিজিটাল পদ্ধতিতে জমা দেওয়া নিশ্চিত করা গেলে প্রথম বছরে রাজস্ব আয় বাড়বে ২ হাজার ৪১০ কোটি ডলার; দ্বিতীয় বছরে বাড়বে ২ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার; তৃতীয় বছরে বাড়বে ৩ হাজার ২০ কোটি ডলার; চতুর্থ বছরে বাড়বে ৩ হাজার ২৬০ কোটি ডলার।

সিপিডি আরও বলেছে, ধারাবাহিকভাবে করব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত ১৬ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।

বাংলাদেশে কর সংগ্রহে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা হলে কেন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বেশি ফল পাওয়া যাবে—এই প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে কর আহরণের অবারিত প্রান্তর পড়ে আছে; অনেক ক্ষেত্রই আছে, যেখানে হাত দেওয়া হয়নি। সেই সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের বড় সুযোগ আছে। আমরা মনে করছি, এখানে কর আহরণে যত অতিরিক্ত বিনিয়োগ করা হবে, তত বেশি হারে আমরা কর আহরণ করতে পারব।’

যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সেখানে অতিরিক্ত এক ডলার বিনিয়োগ করে বাড়তি যে কর সংগৃহীত হবে, আমাদের দেশে তার চেয়ে অনেক বেশি হবে। কারণ, সেখানে প্রায় সবই ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে; সেই সঙ্গে প্রায় সব ক্ষেত্র থেকেই তারা কর সংগ্রহ করে, বাকি কিছু নেই। কিন্তু আমাদের মাঠ অনেকটাই ফাঁকা, সে কারণে অতিরিক্ত বিনিয়োগ থেকে আমাদের প্রাপ্তি বেশি হবে।