করছাড় বন্ধ করে ১০০০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা 

আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আদায় করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনফাইল ছবি

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিভিন্ন করছাড় বাতিল করে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে, আগামী বাজেটে এনবিআরকে নানা খাতে কর কমাতে হবে। এরই অংশ হিসেবে বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে প্রত্যাহার হতে পারে মেট্রোরেলের ওপর ভ্যাটমুক্ত সুবিধাও।

আইএমএফের কাছে দেওয়া এক উপস্থাপনায় এসব তথ্য দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাজস্ব খাত নিয়ে আইএমএফের অন্যতম বড় শর্ত হচ্ছে, রাজস্ব আয়ে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশের অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় করতে হবে। 

এনবিআর সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আদায় করার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোন কোন খাত থেকে বাড়তি কর আদায় হতে পারে, তার একটি তালিকা করেছে এনবিআর। গত রোববার আইএমএফের প্রতিনিধিদের সামনে তা উপস্থাপন করেছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে আরেকটু উচ্চাভিলাষী হওয়া উচিত। টাকার অবমূল্যায়ন ও ডলারের বাড়তি দামের কারণে চলতি অর্থবছর এমনিতেই একটু বেশি কর আদায় হবে। আগামী বছর এই সুবিধা না-ও থাকতে পারে। তাঁর মতে, স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে এনবিআরের উচিত ২০-২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করার পরিকল্পনা করা। করছাড় কমিয়ে এবং কিছু খাতে কর আরোপ করেও বাড়তি অর্থ আদায় করা সম্ভব। 

১০ খাতে আয় বাড়বে ১৫ হাজার কোটি টাকা

স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে বাড়তি ১৫ হাজার ৩০ কোটি টাকা কীভাবে আদায় হবে, তা আইএমএফ জানতে চেয়েছে। 

এনবিআরের প্রতিবেদন অনুসারে, আগামী অর্থবছরে আয়কর খাতে ১ লাখ ৬২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা আদায় করতে হবে। আগের বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আগামী অর্থবছরের আয়কর আদায় হতে পারে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। বাকি থাকে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। মোট ১০টি খাত থেকে এই বাড়তি অর্থ আসবে। সবচেয়ে বেশি কর আদায় হবে করের বিধিবিধান প্রতিপালন করে। এই খাত থেকে আসবে ১৩ হাজার কোটি টাকা; যা মোট বাড়তি লক্ষ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে কর প্রশাসনের নতুন কাঠামো এবং লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি পাস হলে মিলবে বাড়তি জনবল। এ ছাড়া কর প্রশাসনের জন্য ৪০০ গাড়ি কেনার প্রস্তাবও আছে। 

আগামী বাজেটে বিভিন্ন খাতে করছাড় বাতিল করে আসবে আরও ১ হাজার কোটি টাকা। এই খাত নিয়ে আইএমএফের দ্বিমত আছে। আইএমএফ চায়, করছাড় আরও বাতিল করে এই খাত থেকে যেন বেশি কর আদায় করা হয়। অন্যদিকে আয়কর কর্মকর্তারা বলছেন, হুট করে এত করছাড় বাতিল করা বাস্তবসম্মত হবে না। কারণ, বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মতো বিনিয়োগ পরিকল্পনা করেছেন। এখনই সব কর সুবিধা বাতিল করা যাবে না। তবে আগামী অর্থবছরে কর সুবিধা পাওয়া তথ্যপ্রযুক্তি সেবার কিছু খাতে সুবিধা বাতিল করা হতে পারে।

এ ছাড়া কর প্রতিপালন ব্যবস্থা উন্নয়ন করে আরও ২৫০ কোটি টাকা আসবে। অন্যদিকে নতুন করদাতা যাঁরা করজালে আসবেন, তাঁদের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা। এনবিআরের মধ্যে এবং এনবিআর বাইরের সিস্টেম উন্নয়নের মাধ্যমে আরও ৫০ কোটি টাকা করে অর্থ আসবে। এ ছাড়া অন্য যেসব খাত থেকে অর্থ আসবে, সেগুলো হলো নিরীক্ষা খাতে ২০০ কোটি টাকা, অনলাইন রিটার্ন জমায় ১০০ কোটি টাকা, মাঠপর্যায়ে নিরীক্ষা কার্যক্রমে ৩০০ কোটি টাকা, দাপ্তরিক নিরীক্ষায় ৫০ কোটি টাকা, করদাতাদের সেবার পরিসর বৃদ্ধিতে ১০০ কোটি টাকা আসবে। 

এ দিকে কারিগরি সহায়তা চেয়ে গত ৯ এপ্রিল আইএমএফকে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। করদাতাদের ই-ফাইলিংয়ের জন্য কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতেও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা চাওয়ার কথা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে।