পিএমআই সূচক বেড়েছে, সংকোচন থেকে সম্প্রসারণে ফিরেছে উৎপাদন খাত

তৈরি পোশাকশিল্পফাইল ছবি

এপ্রিল মাসে সংকোচনের পর আবারও সম্প্রসারণের ধারায় ফিরল বাংলাদেশের অর্থনীতির উৎপাদন ও সেবা খাতের কর্মকাণ্ড। গত মাসে দেশের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স বা পিএমআই সূচকের মান ছিল ৭০ দশমিক ১। এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে পিএমআই সূচক বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ পয়েন্ট।

মেট্রোপলিটন চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ প্রণীত সর্বশেষ পিএমআই সূচকে দেখা গেছে, মে মাসে দেশের অর্থনীতির প্রধান চারটি খাত, অর্থাৎ কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ ও সেবা সব খাতেরই সম্প্রসারণ হয়েছে। ফলে গত মাসে পিএমআই সূচক ৭০-এর ঘরে উঠে গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মে মাসে দেশের কৃষি খাতের পিএমআই সূচকের মান ছিল ৭৯ দশমিক ৩; আগের মাস অর্থাৎ এপ্রিলে যা ছিল ৬০ দশমিক ৯। অর্থাৎ এক মাসে কৃষি খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে প্রায় ১৯ পয়েন্ট। মে মাসে উৎপাদন খাতের পিএমআই মান ছিল ৭৬ দশমিক ৩; আগের মাস, অর্থাৎ এপ্রিলে যা ছিল ৭৪ দশমিক ৫। অর্থাৎ এই খাতের পয়েন্ট বেড়েছে প্রায় দুই পয়েন্ট।

এ ছাড়া মে মাসে নির্মাণ ও সেবা খাতের পিএমআই সূচক ছিল যথাক্রমে ৭৪ দশমিক ৩ ও ৬৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট। আগের মাস, অর্থাৎ এপ্রিলে এই সূচকের মান ছিল যথাক্রমে ৬৩ দশমিক ৮ ও ৫৬ দশমিক ২। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে নির্মাণ খাতের সূচক প্রায় ১১ পয়েন্ট ও সেবা খাতের সূচক প্রায় ৮ পয়েন্ট বেড়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কৃষি খাত সংকোচনের পর এ নিয়ে টানা পাঁচ মাস এই খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে। নতুন ব্যবসা, ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ও কর্মসংস্থানের ইতিবাচক ধারার পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে এই খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই খাতে কর্মসংস্থানও বেড়েছে।

উৎপাদন খাতের সম্প্রসারণে যেসব বিষয় চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, সেগুলো হলো নতুন কার্যাদেশ, নতুন রপ্তানি, কারখানার উৎপাদন, কাঁচামালের ক্রয়মূল্য ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি। যদিও গত মাসে এই খাতের কর্মসংস্থান কমেছে।

নির্মাণ খাতে দেখা গেছে, নতুন ব্যবসা, নির্মাণ কার্যক্রম, কর্মসংস্থান ও কাঁচামালের দামের ইতিবাচক ধারার পরিপ্রেক্ষিতে এই খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে। অসম্পূর্ণ কাজের পরিমাণ এ নিয়ে টানা দুই মাস কমেছে।

পরিষেবা খাতের সম্প্রসারণে যে বিষয়গুলো কাজ করেছে, সেগুলো হলো নতুন ব্যবসা, সামগ্রিক কর্মকাণ্ড, কর্মসংস্থান ও ব্যয়। অসম্পূর্ণ কার্যাদেশের পরিমাণ ক্রমেই কমছে, যদিও এই হ্রাসের হার কমেছে। এর অর্থ হলো, কয়েক মাস হ্রাসের পর এ ক্ষেত্রে একধরনের স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে।

পিএমআই মান শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হয়। আগের মাসের তুলনায় স্কোর বা মান ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ এবং স্কোর ৫০-এর নিচে হলে বোঝা যাবে, অর্থনীতির সংকোচন হয়েছে। স্কোর ৫০ থাকলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট খাতে ওই মাসে পরিবর্তন হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও মে মাসে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ইতিবাচক বিষয়। এশিয়া অঞ্চলের প্রায় সব দেশেই সম্প্রসারণের যে ধারা দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ হয়েছে। চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামষ্টিক অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে এখনো উদ্বেগ আছে।

গত মে মাসে প্রথম পিএমআই সূচক প্রকাশ করা হয়, যদিও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে সূচকের মান নির্ণয় করা হচ্ছে। দেখা যায়, এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনৈতিক সংকোচন হয়েছিল। ওই মাসে পিএমআইয়ের মান বা স্কোর মার্চের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৬২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে এই সূচকের মান ছিল ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে পিএমআই ছিল ৫৫। দেখা যাচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের পর অর্থনীতির গতিশীলতা বাড়ছে। এপ্রিলে কিছুটা সংকোচনের পর মে মাসে আবার তা বাড়ল।