দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীছবি: সংগৃহীত

দেশের সামস্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদারও প্রায় একই মন্তব্য করেন। মন্ত্রী ও সচিব দুজনই বলেন, মূল্যস্ফীতি কমে আসছে এবং বাড়ছে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়। সচিবালয়ে রোববার অর্থনীতির সার্বিক দিক নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে দুজন সাংবাদিককে তাঁরা এ কথা বলেন। মূল্যস্ফীতি, প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় ছাড়া অন্য কোনো সূচক নিয়ে অবশ্য অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিব কোনো মন্তব্য করেননি।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মাসুদ সাদিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। এক দিনেই তো সবকিছু হয় না। তবে অর্থনীতির সূচকগুলোর ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে শোনা গিয়েছিল নির্বাচনের পর একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে সংস্কারও থাকবে—এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংস্কার একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

মানুষ এখন দুটি বিষয় জানতে চায়, রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল-বৈঠকে এ বিষয়ে কী উঠে এল, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটাও ভালো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য কমে আসছে, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ছে, যা খুবই ভালো ব্যাপার।’

রিজার্ভসহ অর্থনীতির সূচকগুলো নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী কথা বলার দায়িত্ব দেন অর্থসচিবকে। অর্থসচিব বলেন, অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা বোঝার জন্য বৈঠকটি ডেকেছিলেন অর্থমন্ত্রী। সামস্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। রপ্তানি আয়ও মনে হচ্ছে সামনে ভালোই হবে। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হচ্ছে।

রিজার্ভ কীভাবে বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে, অর্থমন্ত্রীর কাছে আবার জানতে চাইলে জবাব দেন বাণিজ্যসচিব। বাণিজ্যসচিব বলেন, রিজার্ভ যেভাবে বাড়ে সেভাবেই বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেমন রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, বিদেশি ঋণ নেওয়া, অফশোর ব্যাংকিং ইত্যাদি। ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে, বেড়েছে রপ্তানি আয়ও।

এ বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আরেকটি বৈঠক করেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতাদের সঙ্গে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, নিট কাপড়ের টি-শার্ট, শার্ট, ট্রাউজার, ওভেন কাপড়ের জ্যাকেট, ব্লেজার—এই পাঁচ এইচএস কোডের পোশাক রপ্তানিতে আর নগদ সহায়তা দেওয়া হবে না। এ ছাড়া শীর্ষস্থানীয় রপ্তানি খাত চামড়া, পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, আসবাব, প্লাস্টিকসহ বেশ কিছু পণ্যেও নগদ সহায়তা কমানো হয়। এর বিপরীতে সংগঠনগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি এ মুহূর্তে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত বন্ধের। প্রতিযোগী দেশগুলো যেভাবে সুবিধা দেয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে আমাদের জন্য সহায়তা ঠিক করতে হবে।’

২০২৬ সালের পর তো নগদ সহায়তা সরকার দিতে পারবে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘২০২৬ পর্যন্ত তো আছে এবং এরপরও যদি সরকার চায় ও আমাদের দরকার হয়, তাহলে অন্য রকমভাবে বিকল্প সহায়তা সরকার দিতে পারে।’

আপনাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী কী বলেছেন, এ বিষয়ে বিজিএমইএর এই সাবেক সভাপতি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন তিনি আরও আলাপ করে সিদ্ধান্ত দেবেন।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. মুনির হোসেন অংশ নেন।