পণ্য পুনর্ব্যবহারে জোর দিতে হবে

সার্কুলার ইকোনমি অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভজনক খাত, তেমনি পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়ও কার্যকর উপায়।

এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’-এর শেষ দিনে ‘সার্কুলার ইকোনমি অ্যাট বাংলাদেশ বিজনেস’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেন সাবের হোসেন চৌধুরী। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে
ছবি: দীপু মালাকার

পণ্যের একবার ব্যবহার যেমন পরিবেশ উপযোগী নয়, তেমনি অর্থনৈতিকভাবেও তা কার্যকর নয়। সে জন্য উন্নত বিশ্ব সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পণ্য পুনর্ব্যবহারের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, যা ‘সার্কুলার ইকোনমি’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশকেও দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য অর্জনে সার্কুলার ইকোনমিতে জোর দিতে হবে।

শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ব্যবসা সম্মেলনের শেষ দিনে গতকাল সোমবার একটি অধিবেশনে বক্তারা এমন অভিমত দেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে। এর আকার এখন ট্রিলিয়ন তথা এক লাখ কোটি ডলার হওয়ার পথে রয়েছে।

একই সঙ্গে পরিবেশগত ঝুঁকিও বাড়ছে। এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার্কুলার ইকোনমি’ দেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভজনক খাত, তেমনি পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়ও কার্যকর উপায় হতে পারে।

সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা—দুটিই রয়েছে জানিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘উদ্যোক্তারা কাজের নিশ্চয়তা, বিনিয়োগ পরিবেশ ও নীতির ধারাবাহিকতা চান। এ সবই আমাদের আছে। সার্কুলার ইকোনমির জন্য সরকারের পূর্ণ রাজনৈতিক ও নীতিগত সহায়তা রয়েছে। সার্কুলার ইকোনমির বাজারের জন্য আমাদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের শুধু বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন।’

প্রণোদনার ভিত্তিতে ও দক্ষতার সঙ্গে কাঁচামালের যথাযথ ব্যবহার এবং সেই সঙ্গে বর্জ্য–উচ্ছিষ্ট, স্ক্র্যাপ, ঝুট, ফেলনা ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি থেকে আবার নতুন পণ্য তৈরি করাকেই বলা হয় ‘সার্কুলার ইকোনমি’। এতে পরিবেশ সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হয়।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত অধিবেশনটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইলের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ নাভেদ হুসাইন।

মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দেশে সার্কুলার ইকোনমির ধারণা নতুন কিছু নয়। আমাদের সাধারণ অভ্যাস ও সংস্কৃতির মধ্যেই এটি রয়েছে। পোশাক, বই, মোড়ক থেকে শুরু করে কৃষিজাত উচ্ছিষ্ট, খাদ্যবর্জ্য, প্লাস্টিক, কাচ, গার্মেন্টস ঝুটসহ বিভিন্ন পণ্য এই সার্কুলার অর্থনীতির অংশ হতে পারে।

চ্যালেঞ্জ কোথায়

সার্কুলার ইকোনমি বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এটি নিয়ে বিভিন্ন শিল্পের মধ্যে আন্তসমন্বয় নেই। বিনিয়োগও অপর্যাপ্ত। এ ছাড়া ভোক্তাদেরও সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে নীতি–সমর্থন ও অর্থসহায়তা প্রয়োজন।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব প্রয়োজন

বিশ্বব্যাংকের পরিবেশবিষয়ক দপ্তরের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ অন জু বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সার্কুলার ইকোনমির মাধ্যমে পণ্য পুনর্ব্যবহারের কাজটি করছে। বাংলাদেশে এ নিয়ে অনেক সভা-সেমিনার হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। আজকের (সোমবার) এই অধিবেশনেও স্থানীয় সরকার, অর্থ কিংবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধিকে দেখছি না। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণের আলোচনা কীভাবে এগোবে?’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়কারী জুয়েনা আজিজ; এইচঅ্যান্ডএম বাংলাদেশের স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ব্যবস্থাপক ফয়সাল রাব্বি; বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামিম আহমেদ; ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও কমিউনিকেশনস বিভাগের পরিচালক শামীমা আক্তার; এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন প্রমুখ।