সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও গ্রাহকের বিমার টাকা পরিশোধ করতে হবে

বিমা খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে গত সোমবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম

শেখ কবির হোসেন, সভাপতি, বিআইএ

প্রশ্ন :

স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বিমা খাত কেন এত পিছিয়ে রয়েছে?

শেখ কবির হোসেন: বিমা খাতটি একসময় অনেক অবহেলিত ছিল। ব্রিটিশ আমলের ১৯৩৮ সালের আইন দিয়ে চলছিল এ খাতটি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এদিকে ভালো নজর দেয়নি। আমার মনে হয়, এর পেছনেও কারণ আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেহেতু সরাসরি এ খাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাই আগের সরকারগুলো সব সময়ই বিমা খাতকে আড়চোখে দেখেছে। বঙ্গবন্ধু এ খাতের সঙ্গে ছিলেন বলেই আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে এ খাতের উন্নয়নে নতুন আইন করেছে। শুধু তা–ই নয়, খাতটিকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণে গঠন করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তবে ধীরে হলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। অনেক দিনের জঞ্জাল তো আর অল্প সময়ে দূর হবে না।

বিমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থ কোম্পানির মালিকপক্ষের সম্পত্তি জব্দ বা বিক্রি করে বিমা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার ক্ষমতাও আছে আইডিআরএর।
শেখ কবির হোসেন, সভাপতি, বিআইএ

প্রশ্ন :

অল্প সময় কোথায়, আইডিআরএ গঠনের তো এক যুগ হতে চলল। অথচ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় বিমা খাতের অবদান কমছেই।

শেখ কবির হোসেন: এটা এক অর্থে ঠিক। জিডিপির তুলনায় তাল মিলিয়ে এগোতে পারছে না বিমা খাত। এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছি আমরা। উন্নয়নশীল দেশের মান অনুযায়ী বিমা খাত তৈরির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। তবে আমাদের অভ্যাস খারাপ। নানা অনিয়ম–দুর্নীতি করি। এ অভ্যাস পাল্টানো জরুরি। তা না হলে এ খাত আরও পিছিয়ে পড়বে।

প্রশ্ন :

বিমা খাত নিয়ে একটা অভিযোগ এখন প্রবল। কোম্পানিগুলো গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক জীবনবিমা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে পাওনা আদায়ে তিন ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড তো পুরো খাতের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

শেখ কবির হোসেন: শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পারিবারিক নয়, যেকোনো কোম্পানির বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া যায়—যে যত ক্ষমতাশালীই হোক না কেন। বিমা দাবি পরিশোধে ব্যর্থ কোম্পানির মালিকপক্ষের সম্পত্তি জব্দ বা বিক্রি করে বিমা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়ার ক্ষমতাও আছে আইডিআরএর। কয়েক দিন আগেও বিআইএর পক্ষ থেকে আইডিআরএ–কে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের পাওনা বুঝিয়ে দেয়। কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করার পরও যদি আরও টাকা বাকি থাকে, তাহলে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হাত দিতে হবে। অনেক হয়েছে। বিমা খাতের ভাবমূর্তির স্বার্থেই আইডিআরএ কঠোর হোক—এটা আমরা চাইছি। যারা গ্রাহকের টাকা দেয় না, সেসব বিমা কোম্পানিকে আমরা ঘৃণা করি। সময় এসেছে তাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে বাদ দেওয়ার।

প্রশ্ন :

আইডিআরএর কাছে যা আশা করছেন, সংস্থাটির কি সেই সৎ সাহস বা সক্ষমতা আছে?

শেখ কবির হোসেন: থাকতে হবে। সংস্থাটি এখন আগের চেয়ে কার্যকর। চেয়ারম্যান ও চার সদস্য নিয়ে আইডিআরএর পুরো দলই এখন আছে। নতুন লোকও নিয়োগ পাচ্ছে। প্রেষণে আসা লোকদের সংস্থার প্রতি অত দরদ থাকে না, যতটা থাকে সংস্থার নিজস্ব লোকের। এটা হয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী আইডিআরএ ছাড়া বিমা খাতের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। একটা কোম্পানি দেখলাম কয়েক দিন আগে আট কোটি টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করল। এটা কোনো গর্বের বিষয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কত দিনের টাকা। তবে বেশ কিছু কোম্পানি সাত দিনেও দাবি পরিশোধ করছে।

প্রশ্ন :

বিমা খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের তো বড় তহবিল ব্যয় হচ্ছে। এতে কী লাভ হচ্ছে?

শেখ কবির হোসেন: তারা শুধু সরকারি খাতে ব্যয় করছে। বেসরকারি খাতে ব্যয় না করলে উন্নয়ন কমই হবে। বিশ্বব্যাংককে বলেছি এ কথা। তারা বলে যে তাদের নীতিমালায় নেই।

প্রশ্ন :

আপনি সব সময়ই বলে থাকেন বিমা খাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর আছে। সব সরকারি সম্পত্তি বা বড় বড় স্থাপনা কেন বিমার আওতায় আসছে না।

শেখ কবির হোসেন: সরকারি সম্পত্তির বিমা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনেকেই তা করে না। এটা দুঃখজনক। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমি একবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, এমনও হতে পারে অনুষ্ঠান হচ্ছে যে ভবনে, সে ভবনটিও বিমার বাইরে রয়েছে। সব স্থাপনাই বিমার আওতাভুক্ত করতে সরকারের শক্ত ভূমিকা নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন :

বিমা খাতের উজ্জ্বল কোনো ভবিষ্যৎ দেখেন কি?

শেখ কবির হোসেন: অবশ্যই এ খাতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। অর্থনীতির ভবিষ্যৎ মানেই বিমা খাত—এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।