শুল্ক বিষয়ে টিকফা ফোরামকে কেন কাজে লাগালাম না: সাবেক বাণিজ্যসচিব

মাহবুব আহমেদ, সাবেক বাণিজ্যসচিবছবি: প্রথম আলো

সাবেক অর্থসচিব ও বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ‘পোশাক খাত দীর্ঘ সময়ে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এবারের চ্যালেঞ্জটা ভিন্নতর। ২০০৫ সালে মাল্টি ফাইবার অ্যারেঞ্জমেন্ট (এমএফএ) শেষ হওয়ার পর অনেকে ধারণা করেছিলেন, পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ তিন বছরের মধ্যেই আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলাম।’

আজ রোববার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মাহবুব আহমেদ এ কথা বলেন। দৈনিক প্রথম আলো রাজধানীর এক হোটেলে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।

এ বিষয়ে মাহবুব আহমেদ আরও জানান, সরকারি সমীক্ষায় তখন বলা হয়েছিল, ৪০ শতাংশ চাকরি বসে যাবে, চাকরি হারাবে প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। এমএফএ বরং আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

মাহবুব আহমেদ আরও বলেন, ‘আমাকে একজন বলছিলেন যে তিন বছর পর ডোনাল্ড ট্রাম্প চলে গেলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। অর্থাৎ অন্য সরকার এলে আর তা থাকবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে যে সরকারই থাকুক না কেন, শ্রম, জেন্ডারসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের নীতির ধারাবাহিকতা থাকে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কাঠামো চুক্তি (টিকফা) করার সময় (২০১৩) বাণিজ্যসচিব ছিলেন মাহবুব আহমেদ। তখন বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন বলে স্মরণ করেন তিনি। তিনি বলেন, টিকফা সই করতে ১১ বছর সময় লেগেছে। এত সময় নেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রশি–টানাটানি।

সাবেক এই বাণিজ্যসচিব বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, আজ যিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আছেন, কাল হয়তো তিনি অন্য জায়গায় চলে গেছেন বা উপজেলা থেকে একজনকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেওয়া হলো। এই কাঠামোতে হাত না দিলে দর-কষাকষির দক্ষতা তৈরি হবে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটা বিসিএস ট্রেড ক্যাডার ছিল, যা এখন নেই। দক্ষ প্রশাসন চাইলে প্রশাসনিক কাঠামোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

সরকারি পর্যায়ে অনেক জায়গায় বিশেষজ্ঞ লোকের অভাব থাকলেও বেসরকারি খাতে, চেম্বারে, সুশীল সমাজে অনেক ভালো বিশেষজ্ঞ আছেন বলে মন্তব্য করেন মাহবুব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও নাকি আলাপ করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। আর এটা সত্য যে আমাদের দর-কষাকষির শক্তি বা ক্ষমতা কম। শুল্ক বিষয়ে টিকফা ফোরামটাকে কেন কাজে লাগালাম না, এটা আমার প্রশ্ন। বছরে একবার বৈঠক হওয়ার কথা আছে, কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতিতে জরুরি বৈঠক করা যায়।’