ফাল্গুনে শতকোটি টাকার বাণিজ্য

ব্যবসায়ীরা জানান, ফেব্রুয়ারি তথা ফাল্গুন মৌসুমে ঢাকায় খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে আনুমানিক ১৩৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।

পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন বয়সের নারীরা নিজেদের সাজে ফুলের ব্যবহার করে থাকেন। গতকাল ঢাকার শাহবাগের একটি ফুলের দোকানেছবি: দীপু মালাকার

দেশে এবার গত বছরের তুলনায় ফুলের উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে ফুলের চাহিদা আর দামও বেড়েছে। এতে সব মিলিয়ে চলতি ফাল্গুন মৌসুমে ফুলের বেচাকেনা ১০০ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা করছেন ঢাকার পাইকারি ও খুচরা ফুল ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সোমবার রাজধানীর শাহবাগ, আগারগাঁও (শেরেবাংলা নগর) ও গুলশানের ফুলের পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে উৎপাদন ও সরবরাহের খরচ গত বছরের তুলনায় বেশি। এ জন্য পাইকারি পর্যায়ে এবার জাতভেদে কোনো কোনো ফুলের একেকটির দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস ছাড়াও চলতি মাসে কয়েকটি দিবস ও উৎসব রয়েছে। যেমন ৭ ফেব্রুয়ারি গোলাপ দিবস। মূলত এদিন থেকেই মৌসুমের ফুল বিক্রি শুরু হয়। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস। আর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। সব মিলিয়ে এ মাসে ভালো অঙ্কের মুনাফা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি বাবুল প্রসাদ বলেন, ‘এবার ফুলের উৎপাদন অনেক বেশি। বেচাকেনার পরিস্থিতিও ভালো। সব মিলিয়ে আশা করছি এ বছরের ফুল বিক্রির লক্ষ্য অর্জন হবে।’

বেচাকেনা হবে ১৩৫ কোটি টাকার

রাজধানী ঢাকায় ফুলের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম হল শাহবাগ, যেখানে ফুল বিক্রি করেন শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে খুচরা ফুল বিক্রির দোকানও আছে অর্ধশতাধিক। গত বছর শাহবাগে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মতো ফুল বিক্রি হয়। ঢাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুলের বাজার আগারগাঁওয়ে। সেখানেও ফুলের শতাধিক পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী আছেন। এই বাজারে গত বছর ১৫ কোটি টাকার বেশি ফুল বেচাকেনা হয়। এ ছাড়া গুলশানসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক পাইকারি ও খুচরা দোকান রয়েছে। সব মিলিয়ে গত বছর ঢাকায় প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়।

চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ফুলের বেচাকেনা ভালো। বিক্রেতারা আশা করছেন, এ বছর ফুলের বেচাকেনা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাতে শাহবাগে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হতে পারে। আর শাহবাগসহ পুরো ঢাকায় পাইকারিতে সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে। খুচরা পর্যায়ে ফুলের দাম অন্তত দেড় গুণ বৃদ্ধি পায়। সে হিসাবে ফেব্রুয়ারি তথা ফাল্গুন মৌসুমে ঢাকায় আনুমানিক ১৩৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর যশোরের গদখালী ও ঝিনাইদহ জেলা এবং সাভারের গোলাপ গ্রামে আশানুরূপ ফুলের উৎপাদন হয়েছে। পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপনে গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। গত রোববারেই শুধু গদখালী থেকে অন্তত ১০ লাখ গোলাপ সারা দেশে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া জারবেরা, টিউলিপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকাসহ অন্যান্য ফুলও গেছে প্রচুর।

আগারগাঁওয়ের ফুল ব্যবসায়ী মো. সোহেল বলেন, ‘সাধারণত বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলের মৌসুম। তবে ফেব্রুয়ারি মাস ঘিরেই আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ, সারা বছরের বিক্রির ৫০ শতাংশের বেশি বেচাকেনা হয় এ মাসে। সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয় ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনে।’

ফুলের দাম বেড়েছে

ঢাকার শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের খুচরা ফুলের বাজারে গতকাল সোমবার দেখা গেছে, প্রতিটি সাধারণ গোলাপ ৩০-৫০ টাকা ও চায়না প্রজাতির গোলাপ ৬০-৮০ টাকায়, টিউলিপ ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন জাতের প্রতিটি ফুল ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে গুলশানে কিছুটা বেশি দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে।

শাহবাগের খুচরা ফুল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী জানান, চলতি বছর জাতভেদে একেকটি ফুলের দাম ১০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যেমন গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি চায়না প্রজাতির গোলাপ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এবার ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। যাঁরা ফেরি করেন বা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করেন, তাঁরা আরও বেশি দাম নেন। আর আগামীকাল (আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি) খুচরা বাজারে ফুলের দাম আরও চড়া হবে।