মূল্যস্ফীতি রোধে জার্মানিতে বিশেষ তহবিল গঠন

নতুন প্যাকেজের মধ্য দিয়ে সব মিলিয়ে ৯৫ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হলো।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী সূচকে সারা বিশ্ব জেরবার। উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল—সবার গায়েই যার আঁচ লাগছে। মানুষকে মূল্যস্ফীতির আঁচ থেকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোর সরকার নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট বা মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন করা হলো। এবার মানুষ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মূল্যস্ফীতির ধাক্কা থেকে বাঁচাতে জার্মান সরকার ৬৫ বিলিয়ন বা ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গতকাল রোববার জোটের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ২২ ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করার পর এ ঘোষণা দেন। তার আগের দিনই রাশিয়া ঘোষণা দেয়, পাইপলাইনে ত্রুটি থাকায় রাশিয়া আপাতত ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ চালু করেছে না। অর্থাৎ ইউরোপসহ জার্মানিতে গ্যাসের দাম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর ঠিক সেই সময় জার্মান চ্যান্সেলরের এ ঘোষণা দেশটির মানুষের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এ প্যাকেজের অর্থ পরিবহন খাতে ভর্তুকি ও মানুষকে বিভিন্ন সুবিধা দিতে ব্যয় করা হবে বলে জানানো হয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত করারোপ এবং ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক করপোরেট করের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জার্মানি এ অর্থায়ন করবে বলে জানানো হয়েছে।

গত আগস্ট মাসে জার্মানিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল বার্ষিক হিসাবে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউরোপসহ সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতির সূচক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সাধারণত উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা থাকে ২ শতাংশ, সেখানে এখন তা কোথাও ৭ শতাংশের নিচে নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ঘরে উঠেছে।

এ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, গ্যাস সরবরাহকারী হিসেবে রাশিয়া আর নির্ভরযোগ্য নয়। এর মধ্যে শীতকাল আসন্ন, তবে জার্মানি ইতিমধ্যে ভিন্ন উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁর আশাবাদ, শীতকাল পার করার মতো গ্যাস তাঁদের হাতে থাকবে।

চ্যান্সেলর আরও বলেন, শীতকালে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ থাকলেও সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উচ্চ মূল্যস্ফীতির হাত থেকে রক্ষা করা।

তবে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় এই প্রথম নয়, এর আগেও ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছিল জার্মানি। অর্থাৎ নতুন প্যাকেজের মধ্য দিয়ে সব মিলিয়ে ৯৫ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করা হলো। এর আগে গত দুই বছরে অর্থাৎ ২০২০ ও ২০২১ সালে মহামারি মোকাবিলায় ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছিল জার্মানি।

জার্মানির অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডার বলেন, এ প্যাকেজ ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের মধ্যেই যে সীমাবদ্ধ থাকবে তা নয়, বরং বিদ্যুতের দাম বাড়লে প্যাকেজের আকার আরও বড় হতে পারে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই প্যাকেজের বড় একটি অংশ ৯ হাজার কোটি ডলার জ্বালানি-নিবিড় কোম্পানিগুলোকে কর সুবিধা হিসেবে দেওয়া হবে।