অর্থের খোঁজে অর্থ বিভাগ

যশোর জেলা প্রশাসনে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা আট কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা।

অর্থ মন্ত্রণালয়
ছবি: প্রথম আলো

দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে কত টাকা কীভাবে পড়ে আছে, তা খুঁজে দেখতে সরকার এবার জেলা-উপজেলায় যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ধারণা করছে, সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের হিসাব থেকে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা অর্থ উদ্ধারে যশোর জেলা ঘুরে এসেছে অর্থ বিভাগের একটি দল। এর মাধ্যমে পড়ে থাকা অর্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকা সরকারি অর্থের বিষয়ে বাস্তব ধারণা পেতে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু অর্থের সন্ধানও মিলেছে। অর্থ বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল গত ২৯ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরের জেলা প্রশাসন, দুটি উপজেলা এবং একটি সরকারি কলেজ পরিদর্শন করে। এরপর দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও যাবে অর্থ বিভাগের দল। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে দলগুলো আলাদা আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশের সরকারি সব কার্যালয়ের উদ্দেশে নির্দেশনা জারি করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকা ৮২ লাখ ৮২ হাজার টাকার সন্ধান পেয়েছে সফরকারী দলটি। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকার উপজেলা প্রশাসনকে যে টাকা দিয়েছিল, তা থেকে এ টাকা বেঁচে গেছে। নিয়ম হচ্ছে, সরকারি বরাদ্দের টাকা বেঁচে গেলে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন তা ফেরত না দিয়ে ব্যাংক হিসাবে রেখে দেয়। পরে সফরকারী দলের মতামত নিয়ে ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক বলেন, ‘পাঁচ থেকে ছয় বছর আগের এক প্রকল্পের টাকা ব্যাংকে পড়ে ছিল। বুঝতে পারছিলাম না ওই টাকা কী করব। অর্থ বিভাগের দলটি আসার পর পরিষ্কার হলাম। এরপর দেরি না করে ওই টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে দিয়েছি।’

এদিকে যশোরের সরকারি এম এম কলেজ ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় চার লাখ টাকা। এ টাকা মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করে যেসব শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, তাদের বৃত্তির টাকা। বৃত্তির এ টাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে এম এম কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে এসেছেন গত বছরের নভেম্বরে। আর এ টাকা পাঁচ থেকে ছয় বছর আগের। শিক্ষার্থীরা বৃত্তির টাকা নিতে আসেননি বলে টাকাগুলো পড়ে ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শন ও তাদের ব্যাংক হিসাব মিলিয়ে দলটি দেখেছে, জেলাটিতে অন্তত আট কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। এসব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তমিজুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জমা হওয়া টাকা এগুলো। আমরা তথ্য–উপাত্ত দিয়েছি। যে দলটি ঘুরে গেছে, তাদের কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন ও নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।’

প্রশাসনব্যবস্থায় দেশে একসময় মহকুমা ছিল। এসব মহকুমা পরিচালিত হতো একজন সাবডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) আওতায়। ১৯৮৪ সালের পর দেশে আর কোনো মহকুমা নেই। যশোরে এসডিওর একটি হিসাবেরও সন্ধান পেয়েছে সফরকারী দলটি। এমনকি ১৯৬৯ সালেরও একটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দলটি।

সরকার কেন এ ধরনের অর্থের সন্ধানে তৃণমূল পর্যায়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উচ্চ সুদে ধার করে খরচ মেটাচ্ছে। অথচ অনেক খাতের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে অব্যবহৃত পড়ে আছে। ওই সব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, সরকারের কর ব্যতীত প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ বা এনটিআর) অনেক কমে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে এনটিআর থেকে সরকার পেয়েছিল ৫৮ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। যদিও এর মধ্যে আইন করে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা থেকে নেওয়া ১৬ হাজার কোটি টাকাও ছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাত থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে সারা দেশ থেকে ৫০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এসব অর্থ এত দিন ব্যাংকে অলস পড়ে ছিল।