শিশুশ্রমিক বেড়েছে সাড়ে ৮৬ হাজার

দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। 

গত ১০ বছরে দেশে শিশুশ্রম কমেনি, বরং বেড়েছে। এ সময়ে দেশে প্রায় এক লাখ শিশুশ্রমিক বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাবে, দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯। এ ছাড়া বর্তমান শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তবে ১০ বছরের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দুই লাখের মতো কমেছে। 

 বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২–এর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ উপলক্ষে বিবিএস আগারগাঁওয়ের নিজ কার্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। 

বিবিএস গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত তিন মাসজুড়ে দেশের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে ৩০ হাজার ৮১৬ পরিবার অংশ নেয়। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, দেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে ২০ লাখ ৯০ হাজার শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। তাদের মধ্যে আবার ২০ লাখ ১০ হাজার শিশুশ্রমিক কোনো পারিশ্রমিক পায় না। যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। 

দেশে মোট শিশুর সংখ্যা ৪ কোটি

■ শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে।

■ ২০ লাখ ১০ হাজার শিশুশ্রমিক পারিশ্রমিক পায় না।

■ যারা পারিশ্রমিক পায়, তাদের গড় আয় মাসে ৬,৬৭৫ টাকা।

বিবিএসের জরিপ বলছে, কৃষি, শিল্প ও সেবা—তিন খাতেই শিশুশ্রম আছে। এর মধ্যে কৃষিতে ১ লাখ ৭০ হাজার, শিল্পে ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং সেবায় ১২ লাখ ৭০ হাজার। 

জরিপের পাশাপাশি বিবিএস ‘সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। সরকার ৪৩টি খাতকে শিশুশ্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই ৪৩টি খাতের মধ্যে পাঁচটি খাতকে চিহ্নিত করে জরিপটি করা হয়েছে। খাতগুলো হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ (শুঁটকি উৎপাদন); পাদুকা উৎপাদন; লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ); মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালিসামগ্রী মেরামত (বিশেষত টেইলারিং ও পোশাক খাত)। 

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতের ৪০ হাজার ৫২৫টি কারখানায় সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করে। তাদের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছেলে, বাকিরা মেয়ে। এর মধ্যে শুঁটকি উৎপাদনে ৮৯৮ জন; পাদুকা উৎপাদনে ৫ হাজার ২৮১ জন; ওয়েল্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪ হাজার ৯৯ জন; মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) ২৪ হাজার ৯২৩ জন এবং টেইলারিং ও পোশাক খাতে ২ হাজার ৮০৫ জন শিশু কাজ করে। 

জরিপ দুটির ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক সাদ্দাম হোসেন খান। 

আলোচনা

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘সরকার দাবি করছে না, দেশে শিশুশ্রম নেই। ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই জরিপ দুটি শিশুশ্রম কমানোর নীতি গ্রহণে সহায়তা করবে। 

অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, শিক্ষায় গুরুত্ব দিলে শিশুশ্রম নির্মূল করা সম্ভব হবে। উপবৃত্তির পরিমাণ বাড়ালে স্কুলে যাওয়া আরও বাড়বে। 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টোমো পৌতিয়াইনেন বলেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ ছাড়া শিশুশ্রম নির্মূল করা যাবে না। কারণ, ভালো থাকার জন্য শিক্ষা দরকার। 

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেলের মতে, সারা বিশ্বে ১৬ কোটি শিশু শ্রমে জড়িত। তাদের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান।