অর্থনীতি চলছে ১ শতাংশ মানুষকে সুবিধা দিতে: আমীর খসরু মাহমুদ

সিপিডির বাজেট সংলাপে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ অন্যরা। আজ রাজধানীর একটি হোটেলেছবি: প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতি চলছে ১ শতাংশ মানুষকে সুবিধা দিতে। যেসব স্বার্থগোষ্ঠী বর্তমান সরকারকে বিভিন্নভাবে ক্ষমতায় রাখতে সহযোগিতা করছে, সরকার তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে নানা নীতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার না হওয়ায় দেশে কোনো সুশাসন ও জবাবদিহি নেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি নেতার এমন মন্তব্যের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সুশাসনের ভিত্তিতেই দেশ পরিচালনা করছে। আইনের বাইরে কিছু করছে না। কারও যদি মনে হয় আইনের বাইরে কিছু করছে, তাহলে তারা আদালতে যেতে পারেন।  

আজ রোববার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক বাজেট সংলাপে অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর, জ্বালানি-বিশেষজ্ঞ এম শামসুল আলম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মো. সামীর সাত্তার ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার।

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

গত ৩০ বছরে সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কাঠামোগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণে টাকা পাচার হচ্ছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য

বাজেট সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত ৩০ বছরে সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কাঠামোগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। এটি বন্ধ না করে সরকার পাচারকারীদের বরং প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না হওয়ায় এসব নিয়ে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকছে না।

জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কত কয়েক বছরে এত পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে ও পাচার হয়েছে। কিন্তু কয়জন লোক শাস্তি পেয়েছে। দেশে আইনের শাসন থাকলে নির্বাচনসহ সবকিছু ঠিকভাবে চলত।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একটা প্রমাণ দেখান যেখানে কুশাসন করেছি। যদি কোনো কুশাসন করে থাকি তাহলে আদালতে যান। শুধু সমালোচনা করে দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে হবে না।

মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। এর পেছনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় কারণ রয়েছে। তবে সত্য কথা হচ্ছে, আমরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত পর্যায়ের ৩০ শতাংশ মানুষের কষ্ট কমানো।
এম এ মান্নান, পরিকল্পনামন্ত্রী

অনুষ্ঠানে মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, বহু বছর ধরে ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছে। এরপর যখন সাম্প্রতিক চাপ এল, তখন আর ডলারের দাম ধরে রাখ গেল না। ফলে এর প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। একদিকে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমাগত টাকা ছাপিয়ে যাচ্ছে। এটা আবার মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বাজেটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। এর পেছনে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় কারণ রয়েছে। তবে সত্য কথা হচ্ছে, আমরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত পর্যায়ের ৩০ শতাংশ মানুষের কষ্ট কমানো। এ জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’

রিজার্ভের অর্থ সরকার অপব্যবহার করেছে’
বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের অর্থ সরকার অপব্যবহার করেছে বলে দাবি করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রিজার্ভ একটি সার্বভৌম তহবিল। কিন্তু এটি ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। রিজার্ভের টাকা রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) দেওয়া হয়েছে। ইডিএফে যত অর্থ দেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশ বাইরে পাচার হয়েছে। এ ছাড়া পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রকল্পে রিজার্ভের অর্থ খরচ করা হয়েছে। এসব করা হয়েছে অর্থনীতির মৌলিক নিয়মের বাইরে গিয়ে।

শুধু টাকা ছাপানো বাদে ব্যাংকিং খাতের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে? নাকি একে অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করছে।

জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘যখন ১৫-১৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল, তখনো আমরা আমদানি করে ঠিকভাবে চলেছি। তাহলে এখন কেন পারছি না। এর কারণ আইএমএফের শর্ত। অথচ গত এক দশক ধরে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে এসব সংস্কারের জন্য বলা হয়েছে।’  

অবশ্য অর্থনৈতিক চাপ থাকলেও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘ধারাবাহিকতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকে, তাহলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। এ কথার সঙ্গে সবাই একমত হবেন। আমরাও সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’

চলমান বিদ্যুৎ সমস্যা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের অবস্থা আগে ভালো ছিল। মাঝখানে খারাপ হয়েছে। এখন আবার স্থিতিশীল হচ্ছে। আর বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজেট এখনো খসড়া পর্যায়ে আছে। এটি নিয়ে যে এত আলোচনা হচ্ছে, সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ আমরা করে দিয়েছি।’