নতুন করে পর্যালোচনার তাগিদ

বক্তারা বলেন, চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা শেষ হওয়ার পর এলডিসি থেকে উত্তরণের সময় চলে আসবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দুই বছর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে করোনার সংকট কাটালেও অর্থনীতিতে নতুন অভিঘাত হিসেবে এসেছে মূল্যস্ফীতির চাপ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিত্যপণ্যের বিশ্ববাজারে এখনো চাপ কমেনি। দেশের বাজারে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানির দাম এখনো চড়া। আবার সামনে আছে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বিভিন্ন সূচক মধ্য মেয়াদে পর্যালোচনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (জুলাই ২০২০-জুন ২০২৫)’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আইসিএবি ভবনে এ আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘বর্তমান পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি বাজেটের সঙ্গে অনেকটা সমন্বয় করা হয়েছে। কিন্তু করোনাসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ অবস্থায় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি মধ্যবর্তী সময়ে আরেকবার মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। আমরা এই পরিকল্পনায় সার্বিক বিনিয়োগ, রপ্তানি গন্তব্য বৈচিত্র্যের মতো বিষয়ের সঙ্গে কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি।’

বৈদেশিক ঋণ নিলে তাতে কিছু নীতি সংস্কার হয় উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, ‘আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে, আমি এ ঋণের পক্ষে। অনেকে বলে ঋণ নিলে মাথাপিছু ঋণের বোঝা বাড়বে। কিন্তু এই ঋণ ব্যক্তি নেয় না, রাষ্ট্র নেয়। রাষ্ট্র এটা পরিশোধ করবে। ঋণ নিলে সংস্থাগুলো কিছু শর্ত দেয়। তাতে কিছু নীতি সংস্কার হয়, সেটাও একটা অগ্রগতি। তবে এখন ঋণ নিতে সংস্থাগুলো বড় কোনো শর্ত দেবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বলেন, ‘এই পরিকল্পনায় ১ কোটি ১৩ লাখের বেশি কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ কাজটা করা সম্ভব হলে মানুষের আয় বাড়বে। যেটা পরিকল্পনাকে সফল করতে ভূমিকা রাখবে। বাণিজ্যঘাটতি ও চলতি হিসাবের ঘাটতিতে লাগাম টানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার কাজ করছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও হয়তো ভালো অবস্থানে চলে আসবে। তবে সংকটকালে যে কৃষি আমাদের রক্ষা করেছে, তার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি হওয়া উচিত রপ্তানি ও উৎপাদননির্ভর। তৈরি পোশাক খাতের ৪২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রপ্তানি বৈচিত্র্যের যে লক্ষ্য ঠিক করা আছে, তা অর্জন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এনবিআরকে কর সংগ্রহের বিষয়টি এখনো ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বিষয়টি হওয়া উচিত ছিল এনবিআরের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে।