আমদানি শুল্ক আদায়ে স্বস্তি শেষ

ডলার-সংকট ও আমদানি নিরুৎসাহিত করায় আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রধান কার্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে কয়েক মাস ধরে দেশে আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায় বেশ বেড়েছিল। গড় প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের বেশি ছিল। আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ের এই প্রবৃদ্ধিই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) স্বস্তি দিচ্ছিল। কিন্তু অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বর শেষে সেই স্বস্তির জায়গাটি আর থাকেনি। আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আদায়ে টান পড়েছে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানিতে রাশ টানতে সরকার ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কঠোর নীতি অবলম্বন করাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ায় শুল্ক-কর আদায়ের গতি কমেছে।

জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। এরপর অবশ্য প্রতি মাসেই এই প্রবৃদ্ধি কমেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যখন বাড়তি মূল্যে পণ্য আমদানি করতে হয়, তখন শুল্ক-কর আদায় তুলনামূলক বেশি হয়। কিন্তু আমদানিতে লাগাম টানতে সরকার কিছু পণ্যে শুল্ক-কর ও এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দিলে আবার আমদানির পরিমাণ কমে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় ডলার-সংকট।

এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, এখন আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর কমলেও অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ব্যাংকের ডলারের সংকট কমে গেলে আমদানি আবার বাড়বে।

ঘাটতি প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সার্বিকভাবে এনবিআরের শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৯ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। এই সময়ে এনবিআর ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট শুল্ক-কর আদায় করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। তবে আগের বছরের তুলনায় শুল্ক-কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের মতো।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরকে মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার বিশাল লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে গতবারের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশের মতো বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি কোনো ইতিবাচক সংবাদ পাচ্ছে না। এই যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দার প্রবল পূর্বাভাস রয়েছে। এ জন্য দেশের অর্থনীতিও কিছুটা শ্লথগতিতে আছে। সে জন্য কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। এনবিআরের কর্মকর্তারা আশা করছেন, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও গতি পাবে। তখন রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। লক্ষ্য ছিল ৪৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা আদায়ের। ঘাটতি হয়েছে ৯৩৪ কোটি টাকা।

এরপর আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায় হয়েছে ৩৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। এই খাতে লক্ষ্য ছিল ৪৪ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। আমদানি পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি ঘাটতি হয়েছে।

অন্যদিকে অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আয়কর খাতে ৩৫ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে ৩৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এতে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা।

এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, অন্যান্যবারের মতো এবারও এনবিআরের লক্ষ্য কমানো হবে। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পদ কমিটির সভায় সংশোধিত লক্ষ্য চূড়ান্ত হবে। তখন বিশ্ব ও স্থানীয় অর্থনীতি পর্যালোচনা করে নতুন লক্ষ্য দেওয়া হবে। এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ বছর কোনোভাবে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার বেশি শুল্ক-কর আদায় করা কঠিন হবে।