কমিউনিটি সেন্টার ভাড়ায় রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক, কর অবকাশ উঠছে এক খাতে

২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৩ ধরনের বড় অবকাঠামোয় ১০ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ–সুবিধা আছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এসব বড় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কর অবকাশ–সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনফাইল ছবি

কোনো অনুষ্ঠান করার জন্য কমিউনিটি সেন্টার বা মিলনায়তন ভাড়া করার আগে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিতে হবে। সেই রিটার্ন জমার অনুলিপি জমা দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার বা মিলনায়তন ভাড়া করতে হবে। তা না হলে সেখানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। আসন্ন বাজেটে এমন শর্ত আসতে পারে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবা গ্রহণে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার পরিসর বাড়ানোর অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া বড় অবকাঠামোয় কর অবকাশের যে সুবিধা বর্তমানে দেওয়া আছে, তা উঠে যেতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করদাতাদের রিটার্ন জমা আরও বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৪৩ ধরনের সেবা গ্রহণ করলে রিটার্ন জমার কপি দেখাতে হয়।

সাধারণত বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, গায়েহলুদ, সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সভা, সেমিনার, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে কমিউনিটি সেন্টার ও মিলনায়তন ভাড়া করা হয়। ব্যক্তি করদাতা ও প্রাতিষ্ঠানিক করদাতা-উভয় ক্ষেত্রেই এনবিআরের নতুন শর্ত প্রযোজ্য হবে বলে জানা গেছে।

কমিউনিটি সেন্টার ও মিলনায়তন ভাড়া করার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। যেমন কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা মিলনায়তনের ভাড়া ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে কিংবা ১০০ জনের বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হলেই রিটার্ন জমার অনুলিপি দেখানোর শর্ত প্রযোজ্য হতে পারে।

বর্তমানে আয়কর আইনে কোনো করদাতার দেশে বিদেশে ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে; ফ্ল্যাট বা বাড়ি-গাড়ি কিংবা কোম্পানির পরিচালক হলেই প্রতিবছর জীবনযাত্রার খরচ জানাতে হয়। সেখানে একটি খাত আছে, যেখানে উৎসব ও অন্যান্য বিশেষ খরচের কথা জানাতে হয়। বিয়েশাদি, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন—এসব অনুষ্ঠানের খরচ এই খাতে লিখতে হয়।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে এসব অনুষ্ঠান করা হলে পরে রিটার্নের সঙ্গে তা যাচাইবাছাই করা সহজ হবে। জীবনযাত্রার সঙ্গে আয়ের সংগতি আছে কি না, তা জানা যাবে।

এ ছাড়া ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতালের নিবন্ধন ও নিবন্ধন নবায়নের ক্ষেত্রে ওই সব প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন জমার কপি দেখানোর বাধ্যবাধকতা রাখা হতে পারে।

বর্তমানে ৪৩ সেবায় রিটার্ন বাধ্যতামূলক

গত অর্থবছর থেকে ৩৮টি সরকারি বেসরকারি সেবা গ্রহণকালে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়। চলতি অর্থবছরে এর আওতা আরও বাড়িয়ে ৪৩টি সেবা করা হয়।

এই ৪৩ সেবার মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন; ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা; ক্রেডিট কার্ড নেওয়া; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায় সমিতির সদস্য হলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ; ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন; সিটি করপোরেশন এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সরকারি পরিষেবার সংযোগ নিতে হলে; ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত থাকলে; সরকারি কর্মচারীরা ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতন পেলে; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি করপোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণকালে ওই পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর; ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডার বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে বা বহাল রাখতে; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এমন গঠিত কর্তৃপক্ষ বা অন্য সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিলকালে।

বড় অবকাঠামোয় কর অবকাশ সুবিধা উঠছে

২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৩ ধরনের বড় অবকাঠামো খাতে ১০ বছর পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা আছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এসব বড় অবকাঠামোর ক্ষেত্রে কর অবকাশ সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে এই কর সুবিধা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

যেসব খাতে কর অবকাশ সুবিধা উঠতে পারে, সেগুলো হলো গভীর সমুদ্রবন্দর বা নদীবন্দর; এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে; রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল; ফ্লাইওভার, টোল রোড ও ব্রিজ; গ্যাস পাইপলাইন; আইসিটি পার্ক; হাইটেক পার্ক; অনুমোদিত পানি শোধনাগার; পানি সরবরাহ বা পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা; এলএনজি টার্মিনাল ও সঞ্চালন লাইন; মনোরেল ও সাবওয়েসহ রেলপথ; নবায়নযোগ্য জ্বালানি।