বাজেটে কর্মসংস্থান ও শিক্ষায় জোর দিতে হবে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার শুধু অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এগুলো রাজনৈতিক সংকটও। এ জন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরি। বাজেট বিষয়ে আজ বুধবার রাজধানীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘বাজেট: গণমানুষের ভাবনা’ শীর্ষক এই সভায় বক্তারা বলেন, আসন্ন বাজেটে খাদ্য, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই বরাদ্দ যাতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ছাড়াই খরচ হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সিপিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সরকার বাজেটের আগে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বড়লোকদের সঙ্গে সংলাপ করে। যারা দেশের টাকা পাচার করছে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে শোধ করে না—এসব সংলাপ তাদের সঙ্গেই হয়। অথচ দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রেখেছে, সেই শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে সংলাপ হয় না।

সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, এবারের বাজেটে প্রধান দুটি সংকট হলো অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের ক্ষমতা বর্তমানে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছেছে। পাচারের টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই। সে জন্য বাজেটে এ ব্যাপারে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। শীর্ষ খেলাপিদের নাম প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ তাজুল ইসলাম বলেন, বাজেটের লক্ষ্য স্থির থাকছে না। তাতে আসল সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এর মূল কারণ রাজনীতি ঠিক নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও ডলার–সংকটের মতো সমস্যা এখন প্রকট। দেশে যথাযথভাবে ডলার আসে না। আবার দেশ থেকে ডলার চলে যায়। যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া সম্পদের লুটপাট ঠেকানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, বাজেটে গরিবের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, স্বাধীনতার পর যত ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে এই সরকার। সরকারের সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারাই বলছে, জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কে, সেই প্রশ্ন করতে হবে।

রাশেদ আল তিতুমীর আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর নামে কয়েকটি খাতে বরাদ্দ দিয়ে দেশের মানুষের সংকট সমাধান করা যাবে না। সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল কথা হবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ে মানুষের দায়িত্ব নেওয়া। করের টাকা লুটপাট নয়, জনস্বার্থে ব্যবহার করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনা সভায় কৃষক আবদুল বাতেন বলেন, প্রকৃত কৃষক জমি চাষ করে না, বর্গাচাষিরাই কৃষি কাজ করেন। অথচ তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি কোনো প্রণোদনা পান না। ফসলের ন্যায্য দামও পান না। দিন দিন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, ঠিকমতো বিদ্যুৎ নেই। সারের দাম বাড়তি, ভালো মানের কীটনাশক ও কৃষি বিভাগ থেকে ঠিকমতো পরামর্শ পাওয়া যায় না। বাজেটে এসব নিশ্চিত করতে হবে।

তৈরি পোশাকশ্রমিক সুমা আক্তার বলেন, ‘আমাদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। আমরা নাকি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি। কিন্তু আমরা যে বেতন পাই, তা দিয়ে ঠিকমতো খেতে পারি না।’

রিকশাচালক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে ঋণ করার পর কিস্তি পরিশোধের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। অথচ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে অনেকে। আমাদের এ দেশের মানুষ মনে করলে বাজেটে দরিদ্রদের জন্য আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। আরও বক্তব্য দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান প্রমুখ।