নমনীয় মুদ্রা বিনিময় হার চায় আইএমএফ, সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন শ্রীনিবাসন

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন (মাঝে)।ছবি: সংগৃহীত

নমনীয় মুদ্রা বিনিময় হার চালুর কথা এক-দেড় বছর ধরেই বলে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। একই পরামর্শ আজ মঙ্গলবার আরও একবার দিয়েছে সংস্থাটি। আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে এখনো ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশের উচিত হবে নমনীয় বা বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা।

বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সকালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতির আঞ্চলিক পূর্বাভাস বা রিজিয়নাল ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ এ কথা বলেছে। এই সংবাদ সম্মেলনে মূলত কথা বলেন আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন।

বর্তমান অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত—৯ মাসে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু একই সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি হচ্ছে ৮৩০ ডলার। এ ঘাটতি এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় চার গুণ বেশি।
কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, মুদ্রা বিনিময় হার নমনীয় করার পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ আর্থিক হিসাব ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাবে।

গত কয়েক বছরে বিশ্বের অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি বড় ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থনীতিতে এগুলোর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। পুরো বিশ্বের মতো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিও ধাক্কা খেয়েছে।

এসব বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এই ধাক্কা থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। টেকসই পুনরুদ্ধারের জন্য রাজস্বনীতির সংস্কার যেমন দরকার, তেমনই দরকার মুদ্রা বিনিময় হারকেও নমনীয় করা।

বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি চলমান। এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক যাত্রা গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে। আইএমএফ দু্ই কিস্তির অর্থও ইতিমধ্যে ছাড় করছে। তৃতীয় কিস্তি অর্থ পাওয়ার কথা আগামী মাসে। এ ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণের বিষয় আছে।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন–সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা মোকাবিলা করার চেষ্টায় আছে বাংলাদেশ। দেশটি সক্রিয়ভাবে এ বিষয়ে আইএমএফের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে এবং আইএমএফ সেই সহায়তা করছেও। আর তাই সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভালো করছে বাংলাদেশ।

রিজিয়নাল ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।
ছবি: সংগৃহীত

আইএমএফ মনে করছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হার গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম। আগের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ৬ শতাংশ। আইএমএফ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।  

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম থাকার জন্য আর্থিক হিসাব ভালো না থাকাকেও দায়ী করেন কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন। একই কারণে বাংলাদেশের স্থানীয় মুদ্রা টাকাও চাপের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আইএমএফ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ছয় মাস আগের তুলনায় দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।