জ্বালানি খাতে আর ভর্তুকি নয়: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনে আজ রোববার জ্বালানি খাত নিয়ে এক সেমিনার বক্তব্য রাখছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আজ দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র
ছবি: প্রথম আলো

গ্যাস খাত নিয়ে ব্যবসায়ীদের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, দেশে শিল্পকারখানা বেড়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র বেড়েছে। তাই গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হয়েছে। মজুত গ্যাস খরচ হয়েছে। দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন করেও চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। তাই ঘাটতি মোকাবিলায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে হচ্ছে।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশ ব্যবসা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এক সেমিনারে আজ রোববার এসব কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে আর ভর্তুকি নয়। সরকার ধীরে ধীরে সেদিকেই যাচ্ছে। অনেকে বলেন গ্যাস খাতে কিছুই হয়নি, তাঁরা সঠিক তথ্য জানেন না। ২০০৯ সালে দিনে গ্যাস উৎপাদন হতো ১৬০ কোটি ঘনফুট। এটি বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ২৭০ কোটি ঘনফুট করেছে। এখন দিনে উৎপাদিত হচ্ছে ২৩০ কোটি ঘনফুট। দ্রুত অনুসন্ধান কূপ করলেও আগামী তিন বছরে হয়তো বড়জোর আরও ৫০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়ানো যাবে।

বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য শুধু শিল্পায়নে নয়, গ্রামও বদলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়তি নেই। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এখন সহনীয় দামে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য।

বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান নিয়েও সমালোচনার জবাব দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমুদ্রে গ্যাসের বিপুল সম্ভাবনা এখনো প্রমাণিত নয়। যাঁরা বলছেন, তাঁরা তো জরিপ করেননি। কনোকো, দাইয়ুর মতো একাধিক কোম্পানি চলে গেছে সমুদ্রে অনুসন্ধানকাজ শেষ না করে। তারা বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক মনে করেনি। এখন সমুদ্রে বহুমাত্রিক জরিপের কাজ করছে সরকার। গ্যাসের দামও বেড়েছে। অনেক বিদেশি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে অনুসন্ধানে।

সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৪ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন পাঁচ গুণ হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। তবে স্থলে ও সমুদ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। একসময় গ্যাস রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। এরপর জানা গেল, দেশে গ্যাস নেই।

সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের (গ্যাস, কয়লা) ব্যবহারে সরকারকে নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে আন্তসীমান্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ উৎসাহিত করতে হবে। এলএনজি মজুত ক্ষমতাও বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে অতিরিক্ত খরচ করে হলেও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সঞ্চালন-বিতরণ লাইন, জ্বালানি তেল খাতে বেসরকারীকরণের পক্ষে মত দেন তিনি। এমনকি দায়মুক্তি আইন হিসেবে পরিচিত, বহুল সমালোচিত ‘দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধান’ আইনের মেয়াদ বাড়াতে বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০০৯ সালের আগে দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হতো। শিল্পকারখানা চালানো যেত না। তারা সরকারের আহ্বানে কুইক রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) খাতে বিনিয়োগ করেছেন। অথচ অনেকে বলেন, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, কিন্তু গ্যাস খাতে কতটুকু অনুসন্ধান হয়েছে, কয়টা কূপ খনন হয়েছে; তেমন কিছুই হয়নি।

জেনারেল ইলেকট্রিক গ্যাস পাওয়ার সাউথ এশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেশ নন্দা বলেন, বাংলাদেশ ঘনবসতির দেশ। জমির স্বল্পতা আছে। তাই সৌরবিদ্যুৎ বাড়ানো কঠিন। পানিবিদ্যুৎ বাড়ানোর তেমন সম্ভাবনা নেই এখানে। বরং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প উপায়ের দিকে যেতে পারে বাংলাদেশ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, দেশে জ্বালানি সম্পদ আছে, তোলা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও উন্মুক্ত খননপদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যেতে পারে। সমুদ্রের সম্ভাবনা এখনো কাজে লাগানো শুরু হয়নি। গ্যাসের দাম বাড়িয়ে হলেও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করার পরামর্শ দেন তিনি।

সেমিনারের শুরুতে সভাপতি হিসেবে সূচনা বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ–সচিব হাবিবুর রহমান। আর সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন।