বেড়েছে সাবলেট দেওয়া নেওয়ার প্রবণতা 

২০২৩ সালে দেশে সাবলেট গ্রহণকারী খানার সংখ্যা ৪ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; ২০২১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। 

অনেক মানুষ সাবলেট নিতে বা দিতে বাধ্য হয়েছেন আর্থিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় খারাপ হওয়ার কারণেফাইল ছবি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খান আতিক (ছদ্মনাম) রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন। তাঁর স্ত্রীও একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ছোট সংসার ভালোই চলছিল। করোনা মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে তাঁদের সন্তানের জন্ম হয়। সন্তান জন্মের পর তাঁরা দেখলেন, এক ধাক্কায় খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে।

সন্তানের দেখাশোনা করার জন্য সহায়তাকারী রাখতে হয় তাঁদের, বেতন ১৩ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় মূল্যস্ফীতির ধাক্কা। শেষ পর্যন্ত এই দম্পতি বাসার একটি ঘর দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়কে ভাড়া দেন; তা না হলে বাড়তি খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না তাঁদের। 

এই বাস্তবতা শুধু খান আতিকের নয়, বরং ঢাকায় বাস করেন সীমিত আয়ের এমন আরও অনেক মানুষের। সাধারণত অবিবাহিত চাকরিজীবী ও বেকার মানুষের বড় একটি অংশ সাবলেট থাকে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, অনেক মানুষ সাবলেট নিতে বা দিতে বাধ্য হয়েছেন আর্থিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় খারাপ হওয়ার কারণে। আবার অনেকে সক্ষমতার চেয়ে বেশি টাকায় বাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে পরে বাধ্য হয়ে আবাসনের একটি অংশ ভাড়া বা সাবলেট দেন। সরকারি সংস্থা বিবিএসের জরিপে এই প্রবণতার প্রতিফলন দেখা গেছে। 

মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে আছেন, সে কারণে তাঁরা নানাভাবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস অনুসারে, দেশে খানাগুলোর মধ্যে সাবলেট দেওয়া ও নেওয়ার প্রবণতা তিন বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে সাবলেট গ্রহণকারী খানার সংখ্যা ৪ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; ২০২১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এই তিন বছরে সাবলেট গ্রহণকারী খানার সংখ্যা ১ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে।

সাবলেট নেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সাবলেট দেওয়া খানার সংখ্যাও বেড়েছে। বিবিএসের ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে সাবলেট দেওয়া খানার সংখ্যা ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে তা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একক বাড়িতে বসবাসকারী খানার সংখ্যা ২০২১ সালে ছিল ৯৭ দশমিক ১ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা ৯৫ শতাংশে নেমে এসেছে। 

বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকল্পের পরিচালক আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একটি বাসস্থানে বসবাসকারী একাধিক পরিবার আলাদাভাবে রান্নার আয়োজন করলে তাদের আলাদা খানা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০২১ সালে দেশে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ দেখা গেছে। তখন বেশ কয়েকবার মানুষের চলাচল ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। করোনার ধাক্কার পর যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে শুরু করে। এরপর দেশে প্রায় দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপর রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে আছেন, সে কারণে তাঁরা নানাভাবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। যাঁরা এককভাবে বাসা নিতে চান, তাঁরা হয়তো নিতে পারছেন না। আর যাঁরা বাসা ভাড়া নিয়েছেন, তাঁরাও হয়তো সব ব্যয় কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে।’