এবার আটা-ময়দার বাজারে অস্থিরতার আশঙ্কা 

  • ২০২১ সালের তুলনায় গত ৬ মাসে দেশে চাল আমদানি কম হয়েছে ১০ দশমিক ৫২ লাখ টন। 

  • গম কম আমদানি হয়েছে ১৪ দশমিক ১১ লাখ টন ।

দেশে চিনির বাজারে অস্থিতিশীলতা চলছে। এর মধ্যে চলতি বছরে গমের আমদানি হয়েছে কম। তাতে গম থেকে উৎপাদিত আটা ও ময়দার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তবে স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি বিবেচনায় ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজের মজুত স্বাভাবিক বলছে সরকারি সংস্থাটি। 

দেশের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পরে চলতি মাসের ২৪ তারিখে ভোগ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে আসে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাল ও গমের আমদানি মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে বলেও সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। 

বাজারে আগে থেকেই বাড়তি আটা-ময়দার দাম। গমের আমদানি কমায় এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে। এর মধ্যে চিনির বাজারও অস্থিতিশীল। 

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, আমদানি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় গত ৬ মাসে দেশে ১০ দশমিক ৫২ লাখ টন চাল ও ১৪ দশমিক ১১ লাখ টন গম কম আমদানি হয়েছে। সরবরাহের এ সংকট গম থেকে উৎপাদিত পণ্য আটা ও ময়দার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা কম হলেও স্থানীয় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সংকট হবে না। দেশে মসুর ডালের আমদানি সন্তোষজনক বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, দেশে ডালের আমদানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ডাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার টন। গত অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজার টন। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় দেশে বছরে ১৩-১৪ লাখ টন ডাল আমদানি হয়। 

দেশের সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে; এটি মূল্যবৃদ্ধির সহায়ক। 

কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনীহা থাকায় অনেক ক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এদিকে দেশে চিনির বাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। 

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার ৩ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছিল; ২০২১-২২ অর্থবছরে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায়। গত অর্থবছরে সরকার ১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে। 

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে আরেক দফা আটা ও ময়দার মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। আর প্যাকেটজাত আটার দাম প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ৬২ টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে খোলা আটায় ৬৬ শতাংশ ও প্যাকেটজাত আটায় ৫০ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে খোলা ও প্যাকেটজাত ময়দার দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫১ ও ৫৪ শতাংশ।