অবশেষে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে শুল্ককর বসল

অবশেষে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক-কর বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য অর্থমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ করা বাজেটে দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রিমিউনারেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্স) অর্ডার, ১৯৭৩–এর প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই প্রস্তাব পাস হলে সংসদ সদস্যদের গাড়িতে শুল্ক-কর বসানোর পথ সুগম হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ করা হতে পারে, বাজেটে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাহলে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা পুরোপুরি থাকবে না। তবে এ জন্য প্রথমে দ্য মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রিমিউনারেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্স) অর্ডার, ১৯৭৩ সংশোধন করতে হবে।

বর্তমানে জাতীয় সংসদের সদস্যরা কোনো শুল্ক-কর ছাড়াই গাড়ি আমদানি করতে পারেন। ৩৬ বছর ধরে এই সুবিধা পেয়ে আসছেন সংসদ সদস্যরা। ফলে সরকারগুলোকে দীর্ঘ সময় ধরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হয়েছে।

সাধারণত গাড়ি আমদানিতে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আসে সম্পূরক শুল্ক বাবদ। বর্তমানে গাড়ির ইঞ্জিনের সিসিভেদে ৪৫ থেকে ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। ফলে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ওই শুল্ক বসানো হলেও বৈষম্য খুব একটা কমবে না।

সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রথম দেওয়া হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ–সংক্রান্ত সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়। পরে বিএনপি আর আওয়ামী লীগ পালাক্রমে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু দুই দলই সুবিধাটি বাতিল না করে বহাল রাখে। ফলে সব দলের সংসদ সদস্যরাই অবাধে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।

এরশাদের পতনের পর পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে (১৯৯১-১৯৯৬) বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ওই সংসদের ৩০১ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনেন।

এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তাদের আমলে ১৭৬ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করেন। পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০০১-২০০৬ মেয়াদের অষ্টম সংসদের সদস্যরা সব মিলিয়ে ৩১১টি গাড়ি আনেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসে। সেবার অর্থাৎ নবম সংসদের মোট ৩১৫ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি এনেছেন।

এ ছাড়া দশম (২০১৪-২০১৮) ও একাদশ (২০১৯-২০২৩) সংসদের সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে মোট কতটি গাড়ি এনেছেন, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ওই দুটি মেয়াদের সংসদ সদস্যরা তিন শতাধিক গাড়ি এনেছেন।