বাড়তি রাজস্ব, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে মূল আলোচনা

চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন আজ রাতে ঢাকা আসছেন। মিশনটি আগামীকাল রোববার লাগাতার বৈঠক শুরু করবে। দুই সপ্তাহ ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক চলবে। মার্কিন ডলার অর্থাৎ মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায়, ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনা—এ বিষয়গুলো এবারের আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, আইএমএফ মিশন প্রথম দিন বৈঠক করবে সাতটি। সচিবালয়ে সকাল সোয়া ৯টায় প্রথম বৈঠকটি হবে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও তাঁর দলের সঙ্গে। এতে আইএমএফ মিশন তাদের সফরের উদ্দেশ্য তুলে ধরবে। এরপরের বৈঠকটি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। এ বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানেরও যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

এরপর অর্থ বিভাগের সঙ্গে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট, সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক খাতের তারল্যপ্রবাহ ও ঋণ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবে আইএমএফের দলটি। অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নররা এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন।

জানতে চাইলে আইএমএফের ঢাকা কার্যালয়ের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দে আজ শনিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইএমএফ মিশন আজ আসবে। এ মিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।’ মিশনপ্রধান ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হো’স হো পদকজয়ী অর্থনীতিবিদ।

আইএমএফের এবারের মিশন আগামীকাল শুরু হয়ে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। বৈঠকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের পাশাপাশি এনবিআর, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এসব দপ্তরের সঙ্গে হবে বলে জানা গেছে।

সব বৈঠক শেষ করে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে আইএমএফের মিশন। সেদিন তারা আবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচিটি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্মসূচিটির আওতায় এখন বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য আশা করছে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ আগামী জুনে একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনবিআরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার পাশাপাশি মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পক্ষে আইএমএফ। আবার ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দামও বৃদ্ধির পক্ষ নেবে সংস্থাটি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হতে পারে। তবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির উপযুক্ত সময় এখন নয়। আইএমএফের উচিত বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝা। উভয় পক্ষ ছাড় দিয়ে হলেও ঋণ কর্মসূচিটি বজায় রাখলে ভালো হবে।’