দারিদ্র্য বৃদ্ধি ঠেকাতে উদ্যোগ কম

কে এ এস মুরশিদ

বিগত কয়েক বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে, এটা সহজেই অনুমান করা যায়। নানা কারণে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দেশি–বিদেশি নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। অর্থনীতিতেও একধরনের নিম্নগতি রয়েছে। এখনো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরে আসেনি।

অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনা চেষ্টা চলছে। বিনিয়োগ না বাড়লে অর্থনীতি বড় হবে না, কর্মসংস্থান বাড়বে না; যা দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলবে, দারিদ্র্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

শহরের দারিদ্র্য পরিস্থিতি কী, তা টের পাই। শহরের শিল্পকারখানা গত কয়েক বছরে কেমন চলেছে, তা জানি। ভালো চলেনি। কিন্তু গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা ভালো চলেছে। কৃষিতে ধস নামেনি।

আরও পড়ুন

দারিদ্র্য কমানোর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। নতুন বিনিয়োগ লাগবে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্যে যত বাধা আছে, তা দূর করতে হবে। বিনিয়োগে কী সমস্যা, আমরা সবাই জানি। সমস্যা অজানা নয়। শুধু উদ্যোগ দরকার।

দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগেছে, আয় কমে যাওয়ায় অনেকে গরিব হয়েছেন। কিন্তু গরিব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দারিদ্র্য বৃদ্ধি ঠেকাতে উদ্যোগ কম। বিশেষ করে চাল, ডালসহ কৃষিপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে।

এ ছাড়া সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক করতে হবে। আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাভোগী অনেক ব্যবসায়ী পণ্যের বাজারে ছিলেন। রাজনীতি ও ব্যবসাকে আলাদা করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ব্যবসা খাত তৈরি করতে হবে।

আরও পড়ুন

বর্তমান সরকার সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। রাজস্ব খাত সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের অটোমেশনসহ (স্বয়ংক্রিয়করণ) অন্যান্য সংস্কার এগিয়ে নিতে হবে।

বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন খাতের সংস্কারের সুপারিশ করেছিল অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্স। অন্তর্বর্তী সরকার সেসব সুপারিশ গ্রহণ করে। কিন্তু এ নিয়ে তাদের বেশি চিন্তা করার সময় হয়ে ওঠেনি বলে মনে হয়। যদি কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হতো, তাহলে অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠানো যেত। কিন্তু সেই বার্তা আসেনি।

কে এ এস মুরশিদ: সাবেক মহাপরিচালক, বিআইডিএস এবং অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান

(মতামত লেখকের নিজস্ব)