মাছ, মাংস, ফল খাওয়া বেড়েছে

জরিপমতে, ৯টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৭টি গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে মানুষের। আর দুটিতে কমেছে।

দেশের মানুষের মাছ, মাংস আর ফলমূল খাওয়া বেড়েছে। তার বিপরীতে ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার বিবিএস এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে।

বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এখন একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৪০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের জরিপে এ পরিমাণ ছিল ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। সেই হিসাবে ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের প্রতিদিনের মাংস গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৪ গ্রাম।

একইভাবে ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, দেশের একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৬৭ দশমিক ৮০ গ্রাম মাছ গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের জরিপে যার পরিমাণ ছিল ৬২ দশমিক ৬০ গ্রাম। আবার ছয় বছরের ব্যবধানে মানুষের প্রতিদিনের ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ২০১৬ সালের হিসাবে একজন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ফলমূল গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ গ্রাম।

বিশ্বজুড়েই দেখা যায় মানুষের আয় বাড়তে থাকলে তাতে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। আবার নগরায়ণের কারণেও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে।
মুস্তফা কামাল মুজেরী, সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রেখেছে দুটি বিষয়। প্রথমত মানুষের আয় বৃদ্ধি, দ্বিতীয়ত নগরায়ণ। এ দুটি কারণে খাদ্যাভ্যাসেও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে গত কয়েক বছরে। বিবিএসের জরিপেও মাছ, মাংস, ফলমূল ও ভাত গ্রহণের মতো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মুস্তফা কামাল মুজেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই দেখা যায় মানুষের আয় বাড়তে থাকলে তাতে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। আবার নগরায়ণের কারণেও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ থেকে বাংলাদেশেও আমরা ধীরে ধীরে সেই প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। তবে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে এ পরিবর্তন ঘটছে কিছুটা ধীরগতিতে।’

বিবিএসের খানার আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর জরিপে ৯টি খাদ্যপণ্য গ্রহণের প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যপণ্যগুলো হচ্ছে ভাত, গম, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য, ডিম ও ফলমূল।

জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, এ ৯টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৭টি গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে এসে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে মানুষের। আর দুটিতে কমেছে। ২০১৬ সালের চেয়ে ২০২২ সালে এসে যেসব খাবার খাওয়া মানুষ বাড়িয়েছে সেগুলো হলো গম, ডাল, সবজি, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য, মাছ, মাংস ও ফলমূল। তার বিপরীতে ভাত ও ডিম খাওয়া কমেছে মানুষের।

মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যায় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণের ক্ষেত্রেও। ২০১৬ সালের তুলনায় মানুষের দৈনিক জনপ্রতি ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে ২০২২ সালে এসে। জরিপের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে এসে জনপ্রতি দৈনিক গড়ে ২ হাজার ৩৯৩ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করেছে। ২০১৬ সালে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১০ কিলোক্যালরি।

গ্রাম ও শহরাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই এ ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে গ্রামাঞ্চলে একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ২৪০ কিলোক্যালরির খাবার গ্রহণ করতেন। ২০২২ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২৪ কিলোক্যালরিতে। একইভাবে ২০১৬ সালে শহরাঞ্চলে একজন মানুষ দৈনিক গড়ে ২ হাজার ১৩০ কিলোক্যালরির খাবার গ্রহণ করতেন। ২০২২ সালে এসে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩২৫ কিলোক্যালরিতে।

মুস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, ‘সাধারণত শহুরে মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাত খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কারণ, ভাত থেকে সবচেয়ে কম খরচে সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্যালরি পাওয়া যায়। এ জন্য গ্রামের গরিব ও কর্মঠ মানুষ অন্যান্য খাবারের তুলনায় ভাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

শহুরে জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয় গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের খাবার খান। আবার গ্রামের মানুষও শহরমুখী হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তার কারণে খাদ্যাভ্যাসে আমরা বড় ধরনের পরিবর্তন দেখছি।’

এদিকে বিবিএসের খানার আয়-ব্যয় জরিপ যে ফলাফল বুধবার প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার অর্ধেকের বেশি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ছয় বছর আগে যা ছিল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সঙ্গে কমেছে সার্বিক দারিদ্র্যের হারও। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে সার্বিক দারিদ্র্য কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে। ছয় বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে এ হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।