মেসি-নেইমারদের জার্সির কাজ কেন পেল না বাংলাদেশ 

কাতার বিশ্বকাপের ৩২টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছে ৯টি ব্র্যান্ড। যার কোনোটিই বাংলাদেশ থেকে সরবরাহ হয়নি।

বিশ্বকাপের অফিসিয়াল টি–শার্ট
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

বিশ্বকাপ ফুটবলে সমর্থকদের জার্সি বা ফিফার অফিশিয়াল টি-শার্টে প্রতিবারের আসরে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ নাম থাকে। তবে মূল পর্বে খেলা ৩২ দলের খেলোয়াড়দের জার্সিতে নাম উঠছে না বাংলাদেশের। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলোয়াড়দের জার্সি তৈরির ক্রয়াদেশ বড় অঙ্কের না হলেও মর্যাদাপূর্ণ। জার্সি সরবরাহের কাজ পেলে দেশের ভাবমূর্তি বাড়ত। একই সঙ্গে বিশেষায়িত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে এগিয়ে যেতেও সহায়ক হতো।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। গত কয়েক বছরে তাঁরা কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ও পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছেন। আশা করছি, ভবিষ্যতে বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের জার্সির ক্রয়াদেশ পাব আমরা।
মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ 

আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, কাতার বিশ্বকাপের ৩২টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছে ৯টি ব্র্যান্ড। সবচেয়ে বেশি ১৩ দলের জার্সি সরবরাহ করেছে নাইকি। এ ছাড়া অ্যাডিডাস সাতটি এবং পুমা ছয়টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছে। বাকি ছয়টি দলের জার্সি সরবরাহ করেছে ছয়টি ব্র্যান্ড।

অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে নাইকি, অ্যাডিডাস ও পুমার পণ্য তৈরির ক্রয়াদেশ পেয়ে আসছে বাংলাদেশ বিভিন্ন পোশাক কারখানা। তবে জার্সি তৈরির কাজ পায়নি তারা। যদিও জার্সি কোথায় তৈরি হয় তা কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়।

দেশের একাধিক রপ্তানিকারক জানান, বিশ্বকাপে খেলা দলগুলোর খেলোয়াড়দের জার্সি তৈরি হয়েছে প্লাস্টিকের বোতল পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে উৎপাদিত কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ে। চীন ও ভিয়েতনামের কারখানায় এগুলো তৈরি হয়েছে। নকশার অনুমোদনসহ জার্সির আনুষঙ্গিক কাজে সময় কিছুটা বেশি লাগে। এ জন্য ব্র্যান্ডগুলো উচ্চ প্রযুক্তির জার্সি তৈরিতে এমন দেশের সরবরাহকারীদের বেছে নেয়, যেখানে কাঁচামাল সহজলভ্য এবং যথাযথ মান নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরবরাহ করতে পারে। বাংলাদেশে কৃত্রিম তন্তুর পোশাক তৈরিতে এখনো নবীন। 

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে নিট পোশাক খাতে প্রথম আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করে উর্মি গ্রুপের ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল। গ্রুপটি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পুমার জন্য পোশাক সরবরাহ করে আসছে।

জানতে চাইলে উর্মি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিকের বোতল পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে উৎপাদিত কৃত্রিম তন্তুর কাপড়ের পোশাক তৈরি করি। আমরা সিমলেস পোশাকও করতে পারি। আশা করছি, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান ফুটবল বিশ্বকাপের মতো বৈশ্বিক বড় আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।’

এনজেড টেক্স গ্রুপ কৃত্রিম তন্তু আমদানি করে প্রথমে ভিসকস, টেনসিল ও মোডাল সুতা এবং তা দিয়ে কাপড় উৎপাদন করছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় প্লাস্টিকের বোতল থেকে পলিয়েস্টার তন্তু উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের জন্য ১০০ কোটি বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনজেড টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালেউদ জামান খান বলেন, ‘আশা করছি আগামী বছর কারখানার উৎপাদন শুরু করতে পারব। এ জন্য আমাদের কারখানাতেই দিনে ১০০ টন ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানায় উৎপাদিত তন্তু দিয়ে এবারের বিশ্বকাপের মতো জার্সি অনায়াসে করা যাবে।’

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) ইয়াংওয়ানের কারখানায় ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের খেলোয়াড়দের জন্য জ্যাকেট তৈরি হয়েছে। এ বছর কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলোয়াড়দের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কোনো জার্সি তৈরির কার্যাদেশ পায়নি বলে জানান একজন কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

দলের জার্সি রপ্তানি না হলেও প্রতিবারের মতো টি–শার্ট ও সমর্থকদের জন্য জার্সি রপ্তানি হয়েছে এবারও। কাতার বিশ্বকাপে ফিফার অফিশিয়াল টি–শার্ট রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙার সনেট টেক্সটাইল লিমিটেড। প্রায় ১৫ লাখ ডলারের ছয় লাখ পিস টি–শার্ট রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফিফার লাইসেন্স পাওয়া রাশিয়ার একটি সরবরাহকারী কোম্পানির কাছে এই টি–শার্ট রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া রাশিয়া বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপের টি-শার্ট প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি করেছে বলে জানান সনেট টেক্সটাইলের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের গুটিকয়েক কারখানা কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ও পোশাক উৎপাদন করে। ফলে খেলোয়াড়দের জার্সির ক্রয়াদেশ না পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। গত কয়েক বছরে তাঁরা কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ও পোশাক উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছেন। আশা করছি, ভবিষ্যতে বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের জার্সির ক্রয়াদেশ পাব আমরা।’

আরও পড়ুন