ছয় মাসে প্রায় ২৮ কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি 

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৪ ডলারের শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। 

সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে শুরু হয় ব্যস্ততা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানকার আড়ত ও দোকানে ট্রাকে করে আনা হয় শুঁটকি। আর সেই ট্রাকভর্তি শুঁটকি নিয়েই সকাল থেকে আসাদগঞ্জে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। ট্রাকে আসা শুঁটকি থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি অংশ সংরক্ষণ করা হয় রপ্তানির জন্য। চট্টগ্রাম নগরের শুঁটকি বেচাকেনার বৃহৎ আড়ত আসাদগঞ্জে গিয়ে এই ব্যস্ততা দেখা যায়। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ৫১৪ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ২৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১১০ টাকা হিসাবে)। এর মধ্যে শুধু ডিসেম্বর মাসেই রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ২৭ হাজার ডলারের সমমূল্যের শুঁটকি। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া শুঁটকির বড় অংশই গেছে হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। 

বছরে রপ্তানি ৬৫ লাখ ডলারের শুঁটকি 

আসাদগঞ্জের শুঁটকির আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া শুঁটকির ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই সরবরাহ করা হয় আসাদগঞ্জ থেকে। আস্ত শুঁটকির পাশাপাশি রপ্তানি হয় মাছের বিভিন্ন অংশবিশেষ কেটে তৈরি করা শুঁটকিও। এর মধ্যে রয়েছে লেজ, পাখনা ও অন্ত্র। এসব শুঁটকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। 

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপাদিত মাছের অন্তত ১৫ শতাংশ শুকিয়ে শুঁটকিতে রূপান্তর করা হয়। মৎস্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে সমুদ্র উপকূল ও অভ্যন্তরীণ জলাধার থেকে প্রায় ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টন মৎস্য আহরিত হয়েছে। তার মধ্য থেকে ওই বছর ৭ লাখ টনের বেশি মাছ শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

দেশে কক্সবাজারের নাজিরারটেক, সোনাদিয়ার চর, মহেশখালী, চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকা, আনোয়ারা উপজেলা, সুন্দরবনের দুবলার চর, সুনামগঞ্জের ইব্রাহীমপুরসহ বিভিন্ন উপকূলবর্তী এলাকায় শুঁটকি তৈরি করা হয়।

আশপাশের দেশগুলোতে শুঁটকির দাম কম। ফলে বাংলাদেশ থেকে শুঁটকি রপ্তানি কমেছে। দেশে কাঁচা মাছের দাম বেশি হওয়ায় শুঁটকির দামও বেশি। তবে গুণগত মানের কারণে দেশীয় শুঁটকির চাহিদা রয়েছে বিদেশে।
মোহাম্মদ আজিজ উল্লাহ, মহাব্যবস্থাপক, আরডিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল

বছরে রপ্তানি ৬৫ লাখ ডলারের শুঁটকি 

২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর—এই ১১ বছরে প্রায় ৭ কোটি ১৭ লাখ ১৯ হাজার ২৬৩ ডলারের শুঁটকি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। সেই হিসাবে বছরে গড়ে প্রায় ৬৫ লাখ ২০ হাজার ডলারের শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। ওই বছর প্রায় ৮৬ লাখ ৬৫১ ডলারের শুঁটকি রপ্তানি হয়েছিল। আর উল্লেখিত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে, প্রায় ৪২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের।

আসাদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, সরাসরি রপ্তানি কাজে যুক্ত না থাকলেও এখানকার ব্যবসায়ীরাই শুঁটকির জোগান দেন রপ্তানিকারকদের। গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। 

মাছের দাম বাড়ার প্রভাব শুঁটকিতে

দেশে সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রুপচাঁদা, ফাইস্যা, ছুরি, সুরমা, লইট্টা, চিংড়ি, ইলিশ, চাপিলা ইত্যাদি মাছের শুঁটকি হয়ে থাকে। মাছভেদে এক কেজি শুঁটকি তৈরিতে প্রজাতিভেদে আড়াই থেকে চার কেজি মাছ প্রয়োজন হয়। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কাঁচা মাছের দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাবে বেড়েছে শুঁটকির দামও। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে শুঁটকি রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। 

আসাদগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মতে, অনেক জেলেই মাছ ধরা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন। পাশাপাশি যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে শুঁটকি করার চেয়ে কাঁচ মাছ বিক্রি করাকে লাভজনক ভাবছেন জেলেরা। ফলে শুঁটকির জন্য ভারত ও মিয়ানমার থেকে মাছ আমদানি হয়। তাতেই দাম বেড়ে যায়। 

১৯৯৯ সাল থেকে শুঁটকি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত চট্টগ্রামের আরডিএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আজিজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আশপাশের দেশগুলোতে শুঁটকির দাম কম। ফলে বাংলাদেশ থেকে শুঁটকি রপ্তানি কমেছে। দেশে কাঁচা মাছের দাম বেশি হওয়ায় শুঁটকির দামও বেশি। তবে গুণগত মানের কারণে দেশীয় শুঁটকির চাহিদা রয়েছে বিদেশে।