সমন্বিত করব্যবস্থার দাবি ফরেন চেম্বারের

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন চেম্বার বা ফিকি বলছে, ১ শতাংশ কর বাড়লে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়। তাই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে করহারকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রাখতে হবে। যদি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইয়ের জন্য অনুকূল কর পরিবেশ তৈরি করা যায়, তাতে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি কর আদায়ও বাড়বে সরকারের।

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনায় এসব কথা বলেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই বা ফিকি) নেতারা। বিনিয়োগ উপযোগী কর পরিবেশ তৈরির জন্য পুরো করব্যবস্থাকে (ভ্যাট, কাস্টমস, আয়কর) অটোমেশনের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। তাদের মতে, এমন একটি করব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে করদাতাদের সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের দেখাদেখির কোনো প্রয়োজন পড়বে না।

করদাতারা অনলাইনে তাঁদের করসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
কর পরিবেশের উন্নতির সঙ্গে এনবিআরের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ সংগঠনটি। তারা বলছে, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে, সেটি অর্জন করতে হলে দরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও একটি শক্তিশালী কর রাজস্বের ভিত্তি। করব্যবস্থা অটোমেশনের জন্য সমন্বিত একটি ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে এনবিআরের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী ফিকি।

বৈঠকে ফিকি আরও জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে একদিকে করপোরেট করহার কমানো হয়েছে, অন্যদিকে কার্যকর করহার বেড়েছে। কারণ, করপোরেট কর কমিয়ে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলোর অনেক খরচকে করের আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে বেড়ে গেছে কার্যকর করহার। সংগঠনটি জানায়, বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের খরচ, রয়্যালটি বা স্বত্ব মাশুল, প্রচারণা কার্যক্রমের খরচকেও করের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এতে যেসব কোম্পানি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করে, তাদের জন্য কার্যকর করভার অনেক বেড়ে গেছে।

ফিকি জানিয়েছে, বর্তমানে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কার্যকর করভার ক্ষেত্রবিশেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ শতাংশে। আর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ করভার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। তবে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ করভার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত।  

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ফিকির সভাপতি ও বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বর্তমান কর জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৭৪ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য রাজস্ব খাতের আধুনিকায়নের মাধ্যমে করব্যবস্থাকে সহজ করার তাগিদ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফরেন চেম্বার বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ২১০টির মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে। সরকারের ৩০ শতাংশ রাজস্ব ফিকির এসব সদস্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা হয়।

এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট আলোচনায় ফিকির পরামর্শক ও হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া সংগঠনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এ সময় সংগঠনটির পর্ষদের সদস্য, সদস্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।