শেখ পরিবার ও ১০ শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক অনিয়মের তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবার ও আলোচিত ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, মুদ্রা পাচার এবং কর ও শুল্ক ফাঁকি—এসব অনুসন্ধান দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের নামে দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। তাদের অনিয়ম তদন্তে গঠিত ১১টি দলকে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারে সমন্বিতভাবে কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সভায় তদন্ত দলের সদস্যরা অংশ নেন। তদন্ত দলে রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। তদন্ত সমন্বয় করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
জানা গেছে, ‘মানি লন্ডারিং অপরাধ অনুসন্ধানে গঠিত যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দলের কার্যক্রম বিষয়ে আলোচনা’ শীর্ষক এই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী ও কবির হোসেন, বিএফআইইউয়ের প্রধান এ এফ এম শাহিনুল ইসলাম ও উপপ্রধান এ কে এম এহসানসহ তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শেখ পরিবার ও ১০ শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক অপরাধ অনুসন্ধানে ১১টি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। এসব দল আলাদা আলাদা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অপরাধ তদন্ত করবে। আগামী সপ্তাহ থেকে তদন্ত কমিটিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অফিস শুরু করবে। তাদের জন্য আলাদা স্থান বরাদ্দ করা হয়েছে। আপাতত প্রতিটি দলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একজন করে কর্মকর্তা রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনার পরিবারের ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ও ট্রাস্টের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে, সেগুলো হচ্ছ আরামিট গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা, সিকদার, বসুন্ধরা, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন ও নাবিল গ্রুপ। এসব গ্রুপের মালিক, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তদন্তের আওতায় থাকবেন। ইতিমধ্যে তাঁদের দেশে ও বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ মিলেছে বলে জানা গেছে।
আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর এবং তদন্তপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর। পাশাপাশি তদন্ত শেষে দ্রুত মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন তিনি। সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব হারানো ব্রিটিশ নাগরিক টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্ত দল। শেখ হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ঘুষ–বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার নিরূপণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, তদন্ত দলগুলোকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন ও বিধিমালা মেনে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধান ও কার্যক্রমের তথ্যাদির গোপনীয়তা ও সংবেদনশীলতা কঠোরভাবে রক্ষা করতে হবে। দলের প্রধানকে নিজ সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধান ও তদন্তের আওতায় নেওয়া গ্রুপগুলোর বেশির ভাগেরই ব্যাংক হিসাব ইতিমধ্যে জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এসব ব্যবসায়ী গ্রুপের সম্পদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ, ঋণের ব্যবহার, অর্থের গতিপথ, তাঁদের ব্যবসায়িক ও অন্যান্য লেনদেন, ঋণের সুবিধাভোগীসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) বিভিন্ন দেশে তাঁদের সম্পদের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।