চামড়াবিহীন জুতায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে যাচ্ছে আরএফএল

আরএফএল ফুটওয়্যার কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা। গতকাল নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কেছবি: সংগৃহীত

আর ১০টি কারখানার মতোই গতানুগতিক ভবন। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা। তাঁরা দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম, কাপ্পাসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য চামড়াবিহীন জুতা বানাচ্ছেন। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি আফ্রিকাতেও যাচ্ছে এই জুতা।

নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কারখানাটি গড়ে তুলেছে আরএফএল গ্রুপ। তিন বছর আগে তারা চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি শুরু করে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তাদের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭ লাখ ডলার। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই রপ্তানি বেড়ে ৭৪ লাখ ডলারে ওঠে, যা তারা চলতি অর্থবছরে শেষে দ্বিগুণ করতে চায়।

সম্ভাবনাময় চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি বাড়াতে ইতিমধ্যে ১৩৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আরএফএল গ্রুপ। শুধু জুতা উৎপাদন নয়, শক্তিশালী সংযোগশিল্পও গড়ে তুলছে তারা। নরসংদীর পাশাপাশি খুব শিগগিরই উত্তরবঙ্গেও এই পণ্য উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আরও শতকোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

কারখানায় বসে গতকাল শনিবার এমন সব পরিকল্পনার কথাই জানালেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী। তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘আমরা গুটি গুটি পায়ে শুরু করেছি। আমাদের প্রত্যাশা, সামনের দিনগুলোতে আমরা চামড়াবিহীন জুতায় ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারব।’

এর আগে সাংবাদিকদের কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া ঘুরিয়ে দেখান আরএফএল ফুটওয়্যারের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রাহাত হোসেন। সেখানে শ্রমিকেরা জুতা সেলাই ও আঠা লাগানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ করছিলেন। এ জন্য তাঁরা লেজার, ডিআইডি, রাবার লাইনসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন।

আরএফএল ফুটওয়্যার কারখানায় ৬টি ভিন্ন শ্রেণির জুতা উৎপাদনের জন্য ১০টি লাইন আছে। সেখানে কাজ করেন আড়াই হাজার শ্রমিক। তাঁরা বর্তমানে কাপড়, রাবার, ইভিএ ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে স্নিকার, নারীদের জুতা ও স্যান্ডেল এবং বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি করেন। এসব জুতার রপ্তানি বা এফওবি মূল্য ৫ থেকে ১২ ডলার বলে জানালেন কর্মকর্তারা।

চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সিইও আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মোট রপ্তানি আয় প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার। তবে শুধু চামড়াবিহীন জুতা থেকেই এই পরিমাণ রপ্তানি সম্ভব। ইউরোপ-আমেরিকার বাইরে আফ্রিকায় চামড়াবিহীন জুতার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে জুতার বাজার ভারত ও চীনের দখলে। ফলে আমাদের সামনে অবারিত সুযোগ।’

চামড়াবিহীন জুতার বাজার ধরতে হলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে হবে। শ্রমিকদের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বাড়াতে হবে, এমন মন্তব্য করলেন আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের এই পণ্যে মূল্য সংযোজন ৪০ শতাংশ। আগামী দিনে এটিকে ৭৫ শতাংশে নিতে চাই। সে জন্য আমরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পশ্চাৎমুখী সংযোগশিল্পে বিনিয়োগ করছি।’

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ৫০ শ্রেণির পণ্য উৎপাদন করে। এই শিল্পগোষ্ঠীতে কাজ করেন ১ লাখ ৪৫ হাজার কর্মী। তাঁদের বার্ষিক লেনদেন ৩০০ কোটি ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)।