শুল্ক সুবিধা দিলে একদল লোক সেটির অপব্যবহার করার জন্য তৈরি হয়: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম আজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনা সভায়ছবি সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, শিল্পকে লক্ষ্য করে যখন কোনো শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়, তখন একদল লোক এসব সুবিধার অপব্যবহার করার জন্য তৈরি হয়। এর ফলে যে শিল্পকে সুবিধা দেওয়া হয়, সেটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

আজ সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক্-বাজেট আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলনকক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) ও বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)।

সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘শুধু রাজস্ব বাড়ানোই এনবিআরের লক্ষ্য নয়। দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা, শিল্পের উন্নয়ন, আমদানিনির্ভরতা কমানো প্রভৃতি লক্ষ্যেও এনবিআর কাজ করছে। এ জন্য বিভিন্ন সময় খাতভিত্তিক শুল্ক সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো শিল্পকে লক্ষ্য করে শুল্ক সুবিধা দেওয়া হলে একদল লোক তৈরি হয় এসব সুবিধার অপব্যবহার করার জন্য। এ কারণে আমাদের খুব হিসাব করে সতর্কভাবে শুল্ক সুবিধা দিতে হয়।’

রহমাতুল মুনিম বলেন, ডলার-সংকট কাটাতে চামড়া ও কৃষিজাত পণ্যের মতো দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো প্রয়োজন। দেশীয় কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্যে মূল্য সংযোজনের সুযোগ অনেক বেশি থাকে। এসব পণ্যে কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক-কর নিয়ে সমস্যা থাকলেও তা মুখ্য নয়। যেমন চামড়ার ক্ষেত্রে পরিবেশগত (কমপ্লায়েন্স) কারণেই বড় বাজার ধরা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া যেসব রাসায়নিক শুধু উৎপাদনমুখী শিল্পের সঙ্গে জড়িত, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক থাকলে সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বারভিডার পক্ষে গণপরিবহনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত ১০ থেকে ১৫ আসনের মাইক্রোবাস আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণ এবং এ ধরনের গাড়ির অবচয় হার ৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন চামড়া পণ্য ও জুতা রপ্তানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বা উৎসে কর আগামী ৩ বছরের জন্য কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ ও রপ্তানি ভর্তুকি বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) দেশীয় স্যানিটারি পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, কিছু কাঁচামাল আমদানিতে পৃথক এইচএস কোড নির্ধারণ, আমদানি করা সিরামিক পণ্যে ন্যূনতম ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করে।

এ ছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের রাসায়নিক আমদানিতে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশে ও চামড়া রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নির্ধারণ এবং প্রণোদনা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।