নিরীক্ষায় পড়লে একজন করদাতার পেছনে ছুটবেন সাত কর্মকর্তা

নতুন আয়কর আইনে নিরীক্ষা কার্যক্রম আগের চেয়ে আরও জটিল করা হয়েছে।
ফাইল ছবি

কোনো করদাতার কর নথি নিরীক্ষায় পড়লে সাতজন কর কর্মকর্তা তাঁর পিছে ছুটবেন। অর্থাৎ একজন করদাতার কর নথির ফাঁকি খুঁজতে সাতজন কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত হতে হবে।

এমনকি নিরীক্ষা কার্যক্রমের জন্য করদাতার তথ্য–উপাত্ত অনুসন্ধান করতে পারবেন না ওই করদাতার কর সার্কেলের কর্মকর্তারা। অন্য সার্কেল থেকে কর্মকর্তা আনতে হবে। আগের মতো দু-একজন কর্মকর্তা নিরীক্ষা করেই করের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না।

নতুন আয়কর আইনে এই ধরনের বিধান করা হয়েছে। নতুন আয়কর আইনটি গত জুলাই মাস থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এই আইনে নিরীক্ষা কার্যক্রম আগের চেয়ে আরও জটিল হয়েছে।

নতুন আয়কর আইনের ১৮২ ধারায় নিরীক্ষা কার্যক্রম কীভাবে হবে, তা বলা হয়েছে। তবে আগের বছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি আয় প্রদর্শন করা হলে করদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা করা যাবে না।

আগে যেকোনো কমিশনারেটের উপ–কর কমিশনারেরা নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারতেন। এই নিরীক্ষা করার প্রক্রিয়া ছিল করদাতার কর নথিকেন্দ্রিক। এখন নিরীক্ষা কার্যক্রম হবে নিরীক্ষা দলকেন্দ্রিক। প্রতিটি কমিশনারেটে খাতভিত্তিক নিরীক্ষা দল থাকবে। যেমন ভ্রমণ এজেন্ট, ওষুধ কোম্পানি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ইত্যাদি।

কীভাবে নিরীক্ষা হবে

একজন করদাতার কর নথি নিরীক্ষায় পড়লে অন্তত সাতজন কর কর্মকর্তা ফাঁকি ধরতে নেমে পড়বেন।

প্রথমেই ওই কমিশনারেটের কর কমিশনার করদাতার তথ্য অনুসন্ধানের জন্য কমপক্ষে দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করবেন। দুজন কর পরিদর্শকের সমন্বয়ে গঠিত হবে এই দল। এই দল করদাতার আয়-ব্যয়, সম্পদ, লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে ৬০ দিনের মধ্যে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দেবেন।

কর কমিশনার পরে সেই অনুসন্ধান প্রতিবেদন নিরীক্ষার জন্য নিরীক্ষা দলের কাছে পাঠাবেন। এই নিরীক্ষা দল গঠিত হবে কমপক্ষে দুজন উপ কমিশনারের সমন্বয়ে এবং কর কমিশনার দলটি গঠন করবেন।

নিরীক্ষা দল নির্দিষ্ট ওই করদাতার যাবতীয় আয়-ব্যয়, সম্পদ, জীবনযাত্রার তথ্য যাচাই–বাছাই করে ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। খসড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি ওই করদাতার কাছে পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চাইবে নিরীক্ষা দল।

নিরীক্ষা দলটি তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে কর কমিশনারের কাছে জমা দেবে। এরপর কর কমিশনার প্রতিবেদনটি অডিট কিউরেটরের কাছে পাঠাবেন। একজন যুগ্ম কর কমিশনার বা অতিরিক্ত কর কমিশনার অডিট কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করবেন। অডিট কিউরেটর নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি পরীক্ষা করে দেখবেন এবং এ বিষয়ে মতামত দিয়ে তা ওই করদাতার সংশ্লিষ্ট উপ–কর কমিশনারের কাছে পাঠাবেন।

এরপর ওই উপ–কর কমিশনার সাত দিনের মধ্যে অডিট কিউরেটরের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই করদাতাকে নিরীক্ষা ফলাফলের বিস্তারিত জানিয়ে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল এবং প্রাপ্য কর পরিশোধের নির্দেশ দেবেন।

জেএনজে অ্যাসোসিয়েটসের কর আইনজীবী সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, এখন অডিটের ধাপগুলো বেড়ে যাওয়ার ফলে হয়রানি বাড়তে পারে। এর ফলে করদাতার সঙ্গে কর কর্মকর্তাদের যোগাযোগের সম্ভাবনা বাড়বে।

বর্তমানে ৯০ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাঁদের মধ্যে বছরে ৩০ লাখের মতো টিআইএনধারী রিটার্ন দেন। প্রতিটি কর সার্কেলে জমা করা রিটার্নের ৫ শতাংশ দৈবচয়ন ভিত্তিতে নিরীক্ষা করে থাকে।