রেস্তোরাঁর খাবারে বাড়তি দাম চাপবে ভোক্তার ওপর

উৎপাদনে গ্যাস লাগে, এমন সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। সবকিছুর দাম খাবারের দামের সঙ্গে সমন্বয় হবে বলে জানান রেস্তোরাঁ খাতের ব্যবসায়ীরা।

চড়ে যাওয়া আটা-ময়দার বাজারে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। চিনির বাজারে অস্থিরতা এখনো কমেনি। চাল, ডালসহ সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে আর কমছে না। দফায় দফায় বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। সব মিলিয়ে চাপের মধ্যে পড়েছে দেশের রেস্তোরাঁ খাত। কারণ, সরকার আরেকবার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। ফলে খাবারের দাম আবার বাড়বে, যা সরাসরি ভোক্তার ওপরে চাপবে বলে মনে করছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ তিন বেলা খোলা রেখে চালাতে গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতো। এর সঙ্গে এখন গ্যাসের বাড়তি দাম যুক্ত হবে। এতে একটি রেস্তোরাঁয় মাসে খরচ বাড়বে ১৫ হাজার টাকা। বিষয়টি শুধু এ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই প্রভাবে অনেকটা অগোচরে বাড়বে বেশ কিছু খরচ। যেমন আটা-ময়দা, চাল, চিনি ও সয়াবিনের মতো পণ্যের কারখানার উৎপাদননির্ভর করে গ্যাসের ওপর।

কাটছাঁট করে টিকে থাকার চেষ্টা তো চলছেই। তবে এখন আরেক দফা দাম বাড়াতে হবে। এ ছাড়া কিছু করার নেই।
মো. ওসমান গনি, সভাপতি, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে এসব পণ্য উৎপাদনের খরচও বাড়বে। ফলে পণ্যমূল্য আবার সমন্বয় হবে। তখন বাড়তি দামে এসব পণ্য কেনার কারণে রেস্তোরাঁর খাবারের দামেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে কোন রেস্তোরাঁর খাবারের দাম কত বাড়বে বা দাম সমন্বয়ের কথা বলে রেস্তোরাঁগুলো মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে রাখবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে।

তবে রেস্তোরাঁ খাতের ব্যবসায়ে পূর্ণ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় খাবারের দাম যৌক্তিক হারে না বাড়লে ব্যবসা হারানোর আশঙ্কা থাকবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মো. ওসমান গনি প্রথম আলোকে বলেন, কাটছাঁট করে টিকে থাকার চেষ্টা তো চলছেই। তবে এখন আরেক দফা দাম বাড়াতে হবে। এ ছাড়া কিছু করার নেই। বিষয়টি এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে কাকে মেরে, কাকে খাওয়াব। তবে এই চাপটা শুধু আমাদের ওপরে নয়। সব খাতের ওপরেই কমবেশি আছে। তাতে ক্রেতাদের ওপরে চাপ বাড়বে। খাবারের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ঢাকা মহানগরে ২০২২ সালে নিত্যপণ্য ও সেবার দাম ১১ শতাংশ বেড়েছে। সংগঠনটির মতে, ২০২২ সাল সাধারণ মানুষের জন্য একদমই স্বস্তির ছিল না। দফায় দফায় চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ, মাংস, সবজি, ফলসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রান্নার জ্বালানি ব্যয় ও পরিবহন ভাড়া মোটাদাগে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্যাব রাজধানীর ১১টি বাজার থেকে ১৪১টি খাদ্য ও ৪৯টি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি সেবার তথ্য সংগ্রহ করে মূল্যবৃদ্ধির এই হিসাব করেছে। সার্বিকভাবে পণ্য ও সেবার গড় দাম বেড়েছে ১১ শতাংশের কিছু বেশি।

আলাদাভাবে খাদ্যপণ্যের দাম ১০ শতাংশের মতো ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর এই চাপ আরও বাড়তে পারে। কারণ, এ বছরের শুরুতেই নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করেছে সরকার।

মোহাম্মদপুর এলাকার রেস্তোরাঁ টাউন হল মেমোরিসের তত্ত্বাবধায়ক হাসান মাহমুদ বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ায় খাবারের দাম বাড়বে।তা না হলে দাম ঠিক রেখে পরিমাণ কমিয়ে সমন্বয় করা হবে।