বাণিজ্য সংগঠন করা আর সহজ হবে না

তিন দশক পর আবার নতুন বিধিমালা হচ্ছে। এর খসড়ায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ৮০ থেকে কমিয়ে ৬৮ করার কথা বলা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

চাইলেই আর বাণিজ্য সংগঠন করা যাবে না। এ জন্য অনেক কঠিন শর্ত পূরণ করতে হবে। কারণ, নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা এভাবেই করা হচ্ছে। এতে কঠিন শর্ত থাকছে, যা পূরণ করে তবেই বাণিজ্য সংগঠন করতে হবে।

প্রায় তিন দশক পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটু কঠিনভাবেই বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে। এর ওপর এখন মতামত নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যমান বিধিমালা ও নতুনটির খসড়া তুলনা করে দেখা গেছে, এবারে অনেক শর্ত পূরণের কথা বলা হয়েছে, যা আগে ছিল না।

দেশে এখন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ১৯৯৪ কার্যকর রয়েছে। এটি করা হয় ১৯৮৫ সালের বিধিমালা বাতিল করে। উভয় বিধিমালাই করা হয় ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশের ভিত্তিতে। সেই অধ্যাদেশ বাতিল করে ২০২২ সালে নতুন বাণিজ্য সংগঠন আইন প্রণয়ন করে সরকার। এ আইনের ভিত্তিতেই নতুন বিধিমালা করা হচ্ছে।

বিধিমালার খসড়া অনুযায়ী বাণিজ্য সংগঠন করতে কমপক্ষে ১১টি সমজাতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানকে একত্রে নামের ছাড়পত্রের জন্য বাণিজ্য সংগঠন মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করতে হবে। সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লিমিটেড কোম্পানি, এক ব্যক্তির কোম্পানি এবং অংশীদারি প্রতিষ্ঠান তিনটেই থাকতে পারবে। নামের ছাড়পত্রের মেয়াদ থাকবে ছয় মাস।

বিদ্যমান বিধিমালায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা নেই। নামের ছাড়পত্র নেওয়া ও এর মেয়াদ থাকার কথাও নেই। তিন–চারটি প্রতিষ্ঠান একত্র হয়েও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বর্তমানে দুই বা এর বেশি বাণিজ্য সংগঠন যদি একই উদ্দেশে লাইসেন্স নেয় তাহলে বাণিজ্য সংগঠন মহাপরিচালক এগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে একত্রীকরণের আদেশ দিতে পারবেন। কোনো বাণিজ্য সংগঠন বা এফবিসিসিআই যদি একত্রীকরণের জন্য আবেদন করে, তখনও তা করতে পারবেন মহাপরিচালক।

বর্তমানে বাংলাদেশভিত্তিক নতুন বাণিজ্য সংগঠন করতে কমপক্ষে দুটি জাতীয় পত্রিকায় এবং অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের ক্ষেত্রে একটি স্থানীয় বা আঞ্চলিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়। নতুন খসড়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলা হলেও তা পত্রিকায় কি না, সেটি স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

নতুন বিধিমালা হলে বাণিজ্য সংগঠন করা একটু কঠিন হয়ে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঠিক কঠিন নয়। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশে আইনটিকে যুগোপযোগী করা হয়েছে, বিধিমালাও এখন সে রকমই হবে। আমরা অবশ্যই চাই যে নামসর্বস্ব কোনো বাণিজ্য সংগঠন যেন না থাকে।

এফবিসিসিআইয়ে মনোনীত পরিচালক কমছে

বর্তমানে ফেডারেশনের পর্ষদ ৮০ জনের। এসব পদ আবার দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হয়েছেন। বাকি ৪০ পরিচালক পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের। তবে ৮০ জন পরিচালকের মধ্যে ৩৪ জন (১৭ জন পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠন ও ১৭ জন জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন) মনোনয়নের মাধ্যমে ভোট ছাড়াই পদ পান। বাকি ৪৬ জনকে সরাসরি সদস্যদের ভোটে জিতে আসতে হয়।

নতুন বিধিতে চেম্বার গ্রুপ থেকে ৩২ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩২ জন করে মোট ৬৪ জন পরিচালক এবং দুটি সংগঠন থেকে সরকার মনোনীত দুজন করে চারজন পরিচালক অর্থাৎ মোট ৬৮ জন পরিচালক নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে। সরকার মনোনীত চার পরিচালকের মধ্যে দুজন হবেন নারী।

ফেডারেশনের পর্ষদে একজন সভাপতি, একজন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে তিনজন করে মোট ছয়জন সহসভাপতি হতে পারবেন। সভাপতি অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে হলে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চেম্বার গ্রুপ থেকে হবেন।

কার্যকর না থাকলে লাইসেন্স বাতিল

লাইসেন্স নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে কার্যালয় স্থাপন না করলে, পরপর দুই বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করলে এবং পরপর দুই বছর নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও রিটার্ন দাখিল না করলে সংগঠনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে—এ কথা উল্লেখ করে খসড়ায় ‘সুপ্ত বাণিজ্য সংগঠন’ নামে একটি ধারা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলে মহাপরিচালক ওই সংগঠনকে সুপ্ত বলে ঘোষণা করবেন। সংশোধনের সুযোগ দিয়েও কোনো অগ্রগতি না হলে ওই সংগঠনের লাইসেন্স বাতিল করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করবেন মহাপরিচালক।

ওয়েবসাইট থাকতে হবে

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নেওয়া এক হাজার বাণিজ্য সংগঠন রয়েছে। এক হিসাবে দেখা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লাইসেন্স নেওয়া বাণিজ্য সংগঠন ছিল ৯৫৫টি। এর মধ্যে এফবিসিসিআই ১টি, বাংলাদেশ চেম্বার ১টি, মেট্রো চেম্বার ৭টি, উইমেন চেম্বার ১৮টি, যৌথ চেম্বার ৫৪টি, পেশাজীবী গ্রুপ বা সমিতি ১৮৭টি, জেলা চেম্বার ৬৪টি ও উপজেলা চেম্বার ২টি এবং অ্যাসোসিয়েশন ৪৫১টি ও অলাভজনক সংগঠন ১৭০টি।

জানা গেছে, এসব সংগঠনের বেশির ভাগেরই ওয়েবসাইট নেই। ফলে এগুলোর সম্পর্কে সাধারণ কোনো তথ্যও কেউ জানতে পারেন না। এখন খসড়ায় বলা হয়েছে, নামের ছাড়পত্র পাওয়ার পর আবশ্যিকভাবে প্রস্তাবিত বাণিজ্য সংগঠনের নিজস্ব ওয়েবসাইট করতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই এ খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এত বড় পরিচালনা পর্ষদ এফবিসিসিআইয়ে দরকার ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ’নতুন বিধিমালায় বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে অধিকতর শৃঙ্খলা আসবে।’