ঋণ ব্যবস্থাপনা
সস্তা বিদেশি ঋণের দিন শেষ হচ্ছে
অর্থ মন্ত্রণালয় মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে বলেছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমলে ও সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড কেনাবেচা চালু হলে চাপ কিছুটা কমবে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চাওয়ার এই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের জন্য সস্তা সুদে বিদেশি ঋণ পাওয়ার দিন ফুরিয়ে আসছে। অর্থাৎ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ এত দিন যেভাবে ১ দশমিক ১ শতাংশ সুদে বিদেশি ঋণ পেয়ে আসছিল, সেভাবে আর নমনীয় বা স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না এলডিসি তালিকা থেকে বের হওয়ার পর। এতে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে গত মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে (এমটিডিএস) এসব কথা বলা হয়েছে। ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত তিন অর্থবছরের জন্য এটি তৈরি করেছে অর্থ বিভাগ। এবার অর্থ বিভাগ এই কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে এক বছর দুই মাস পর। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার প্রথমবার তিন বছরের জন্য এমটিডিএস করেছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। পরের চার থেকে পাঁচ বছর তা আর করেনি অর্থ বিভাগ। গত মাসে আইএমএফের যে স্টাফ মিশন এসেছিল, তখন এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের কাছে তথ্য জানতে চেয়েছিল আইএমএফের দলটি। এরপরই অর্থ বিভাগ এমটিডিএস প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ১৭ হাজার কোটি ও এর সুদ পরিশোধে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাঁদা ও শেয়ার মূলধন বাবদ ব্যয় হবে ৭৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এলডিসি থেকে বাংলাদেশ বের হবে ২০২৬ সালে। এরপর ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময়ও ৩০ বছরের বদলে কমে অর্ধেক হবে। এমটিডিএসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো নমনীয় সুদে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর সুযোগটি কমবে। বিদেশি ঋণে গড়ে ১ দশমিক ১ শতাংশ সুদ দিতে হয়, যা দেশীয় ঋণে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮০ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশীয় ঋণের সুদই ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশীয় উৎস থেকে ৬৩ শতাংশ আর বিদেশি উৎস থেকে ৩৭ শতাংশ ঋণ রয়েছে সরকারের। এমটিডিএসে বলা হয়েছে, দেশীয় উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া বছর বছর বাড়ছে। এ প্রবণতা কমাতে হবে। এ জন্য বিকল্প উপায়ও বের করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বন্ড মার্কেটই হবে অর্থ সংগ্রহের সেরা উৎস। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী হলে অত বেশি ঋণও নিতে হবে না। স্টক এক্সচেঞ্জে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার যেভাবে কেনাবেচা হয়, একইভাবে বন্ডের কেনাবেচা হবে। আগামী মাস থেকেই তা চালু হওয়ার কথা রয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
সব উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাংলাদেশ যত ঋণ পায়, তার মধ্যে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনই (আইডিএ) দেয় ৩৮ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ২৫, জাপান থেকে ১৭, চীন থেকে ৭ ও রাশিয়া থেকে ৬ শতাংশ ঋণ আসে। ভারত, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার হিস্যা ১ শতাংশ করে।
দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি নমনীয় সুদে ঋণ দেয় জাপান। এরপর রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও কোরিয়া। আর দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া ঋণের মধ্যে রয়েছে ৪৬ শতাংশ বাজার থেকে ও ৫৪ শতাংশ সঞ্চয়পত্র ও ভবিষ্য তহবিল থেকে নেওয়া। এমটিডিএসে বলা হয়েছে, বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার কম ঋণ নেওয়ার চেষ্টায় আছে, যাতে কিছুটা সাফল্যও এসেছে।
১৫ বছর আগে বিদেশি ঋণ ছিল ২৭ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৪ শতাংশ। একই সময়ে দেশীয় উৎস থেকে নেওয়া ঋণ ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ২৪ শতাংশ হয়েছে।