কাল–পরশু সারা দিন কর্মবিরতি পালন করবেন শুল্ক–কর কর্মকর্তা–কর্মচারীরা

রাজস্ব প্রশাসনে অস্থিরতা কাটছে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকাংশই নিজেদের কক্ষ ছেড়ে সকাল থেকে এনবিআরের নিচতলায় অবস্থান নেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। এই সময় কাজ হয়নি বললেই চলে। এদিকে কাল ও পরশু একইভাবে সারা দিন কর্মবিরতি পালন করবেন শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে কর্মবিরতি পালন করছেন কর্মকর্তা - কর্মচারীরা
ছবি - এনবিআর কর্মকর্তাদের সৌজন্যে পাওয়া

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন চলছে। আজ চলে কাস্টম হাউস, শুল্ক স্টেশন ছাড়া কর, শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি। ঢাকার বাইরের দপ্তরগুলোয় কর্মবিরতি চলেছে বলে জানা গেছে।

এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কাল ও পরশু কর্মবিরতির কর্মসূচি

আজ বিকেলে আগামী দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। এনবিআর ভবনের নিচতলায় সংগঠনের পক্ষে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপকর কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী কর কমিশনার ইশতিয়াক হোসেন।

ঘোষিত কর্মসূচি হলো আগামীকাল রোববার রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কাস্টম হাউস এবং শুল্ক স্টেশন ছাড়া আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। আগামী সোমবার আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।

চার দফা দাবি

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি। প্রথমত, জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; তিন, রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; চার, এনবিআরে প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আজ শনিবার সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। বিষয়টি নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে চারটি দাবি পূরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, তাঁদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। দাবি আদায় হলে নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে কাজ করে অনিষ্পন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

কয়েক দিন ধরেই আন্দোলন করছেন শুল্ক-কর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। অচলাবস্থা চলছে সারা দেশের শুল্ক-কর কার্যালয়ে। গত মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টাসহ সরকারের তিন উপদেষ্টার বৈঠকেও সমস্যা সমাধান হয়নি। এরপর গত বৃহস্পতিবার শুল্ক-কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রাজস্ব খাতের প্রশাসন আলাদা করার কাঠামো কীভাবে হবে, তা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশ সংশোধন করা হবে। কিন্তু এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা তাঁদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি বহাল রাখেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত অক্টোবর মাসে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদের নেতৃত্বে রাজস্ব খাত সংস্কারে পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করে। তিন মাসের মাথায় গত জানুয়ারি মাসে এই কমিটি একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা আলাদা করার সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন অধ্যাদেশ জারি করা হয়।