ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুগ ডাল রপ্তানি

বাংলাদেশের মুগ ডাল রপ্তানি হচ্ছে জাপানে। জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে গঠিত সামাজিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ইউগ্লেনা নামের এক প্রতিষ্ঠান পটুয়াখালীতে উৎপাদিত মুগ ডাল প্রক্রিয়াজাত করে ১০ বছর ধরে জাপানে রপ্তানি করছে।

এদিকে করোনাকালীন নানা প্রতিকূলতায় মুগ ডাল রপ্তানি কমে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গত মৌসুমে ৩০০ মেট্রিক টন মুগ ডাল জাপানে রপ্তানি করা হয়। এ বছর পটুয়াখালী থেকে এক হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল জাপানে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে রপ্তানির পরিমাণ তিন গুণের বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

গ্রামীণ ইউগ্লেনার তথ্যে জানা যায়, ২০১২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সীমিত পরিসরে মুগ ডাল রপ্তানির জন্য প্রতিষ্ঠানটির চুক্তি হয়। মুগ ডাল কেনার জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে জেলার দশমিনা উপজেলা বেছে নিলেও পরে তারা জেলা সদর ও বাউফল থেকে মুগ ডাল নিতে শুরু করে। মুগ ডাল কেনার পর সেখান থেকে বাছাই করে রপ্তানিযোগ্য বড় আকারের মুগ ডাল প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ঈশ্বরদীতে পাঠানো হয়। ঈশ্বরদীতে মুগ ডাল প্রক্রিয়াজাত হওয়ার পর জাপানে রপ্তানি করা হয়।

গ্রামীণ ইউগ্লেনা বাংলাদেশের সমন্বয়ক মো. নাজমুচ্ ছায়েদাত বলেন, ইউকো সাতাকে নামে জাপানের এক ব্যবসায়ী বাংলাদেশে
ঘুরতে এসে মুগ ডালের ব্যাপক উৎপাদন দেখে জাপানে রপ্তানির উদ্যোগ নেন। মুগ ডাল রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকলেও কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে শুরুতে এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মুগ ডাল রপ্তানির অনুমোদন পান তিনি। তবে ২০১৮ সালে পাঁচ বছরের অনুমোদন পেয়ে মুগ ডাল রপ্তানি করে যাচ্ছেন তাঁরা।

এ ছাড়া চাষিদের অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে চাষিদের মুগ ডালের মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য সৃষ্টির সুযোগ থাকছে না। চাষিরাও ফসলের ন্যায্য ও উচ্চমূল্য পাচ্ছেন।

জাপানে শুধু বড় দানার মুগ ডাল রপ্তানি হচ্ছে। তাই প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তিভিত্তিক ২ হাজার ২০৩ জন চাষির মাধ্যমে বারি-৬ জাতের (বড় দানা) মুগ ডালের আবাদ করে তাঁদের কাছ থেকে ডাল কেনা হচ্ছে।

জাপানে প্রতিবছর ৫০ হাজার মেট্রিক টন বড় দানার মুগ ডালের চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য মুগ ডালের চাহিদা পূরণে জেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বারি-৬ জাতের (বড় দানা) মুগ ডালের আবাদ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ইউগ্লেনার চুক্তিভিত্তিক ১০ হাজার চাষি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই চাষিদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে প্রতি কেজি ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দিয়ে বড় দানার মুগ ডাল কিনছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপপরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, মৌসুমে অন্যান্য ফসলের চেয়ে মুগ ডাল
চাষ সহজ। স্বল্প সময়ে জমি প্রস্তুত করা যায়, পরিশ্রম ও ব্যয় অনেক কম হয়। তিনি বলেন, জমি একটি চাষ দিয়েই বীজ বপন করা যায়। আবহাওয়াগত কারণে এ অঞ্চলে মুগ ডাল গাছে ৮০ থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং তিন থেকে চারবার ফলন পাওয়া যায়। তাই মুগ ডাল চাষ বৃদ্ধি করে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পটুয়াখালী কার্যালয় থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী জেলায় এ মৌসুমে ৮৬ হাজার ৪৩১ হেক্টর জমিতে মুগ ডালের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৮৯ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৯৭ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন। এ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য মুগ ডাল আবাদ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি পুনর্বাসনের আওতায় এ বছর জেলায় ২০ হাজার কৃষককে মুগ ডালের বীজ ও সার সহায়তা করা হয়েছে।