আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত, রাজস্বঘাটতি বাড়ছে 

হিলি স্থলবন্দর
ফাইল ছবি

দিনাজপুরের বিরামপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পণ্য আমদানি কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার বাংলাদেশ থেকে পণ্য সেই দেশে রপ্তানিতেও ধস নেমেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের দাবি, কয়েক মাস ধরে হিলির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। ডলার-সংকটের কথা বলে ব্যাংকগুলো নতুন ঋণপত্র (এলসি) খুলছে না। এর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। অন্যদিকে সীমান্তের ওপারে ভারতে পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার তেমন বন্দোবস্ত নেই। সেখানে পণ্য রাখার শেডের ব্যবস্থাও খুবই শোচনীয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি কমে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে।

কাস্টমস বিভাগ বলছে, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) এই স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্বঘাটতি হয়েছে ৪৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ সময় রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। 

এদিকে ডলার নিয়ে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন। আমদানিকারকদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো ডলার-সংকটের কথা জানিয়ে বলছে যে নতুন এলসি খোলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলো বলছে, দেশে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডলার-সংকট চলছে। এ কারণে আমদানিকারকেরা নতুন এলসি খুলছেন না।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন প্রথম আলোকে বলেন, ডলার-সংকটের কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে ছন্দপতন ঘটেছে। আমদানি অস্বাভাবিক হারে কমেছে। 

জনতা ব্যাংকের হিলি শাখার ব্যবস্থাপক মোরশেদ গোলাম রব্বানী মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানিকারকেরা এখন বিলাসবহুল পণ্যের আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলছেন না। এ ছাড়া এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ছাড়পত্র-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ভারতীয় পণ্য কম আমদানি হচ্ছে। 

এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে ভারতীয় পণ্য আমদানি কমেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ছয় চাকার গাড়িতে ১৪ মেট্রিক টন ও ১২ চাকার গাড়িতে ১৮ মেট্রিক টন ফল আমদানির শর্ত দিয়েছে। 

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, আগে খোলা এলসি অনুযায়ী এখন ভারত থেকে চাল, পেঁয়াজ, জিরা, আদা, রসুন, বিভিন্ন ধরনের ফল, চিটাগুড়, গমের ভুসি, খৈল, ভুট্টার বীজ এবং ভারী যন্ত্রের মধ্যে মাটি খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) ও মিক্সার মেশিন আমদানি করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে আলু, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, পেঁয়াজের ফুলকা, কলা, পাটের বস্তা, ঝুট কাপড় ইত্যাদি। 

হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ আগেও এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি ভারতীয় ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করত। সেই সংখ্যা কমে এখন ১৫০-১৬০টিতে নেমেছে।