ঢাকার কিছু এলাকার ভবনের আয়তন বাড়বে, কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ

সময়ের পরিক্রমায় বহুতল ভবনের সংখ্যা বাড়ছেফাইল ছবি

আবাসন ব্যবসায়ী ও জমির মালিকদের চাপে ঢাকার কিছু এলাকায় বর্তমানের চেয়ে বেশি আয়তনের ভবন নির্মাণের সুযোগ করে দিতে রাজধানীর নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ সংশোধন করছে সরকার। এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

এবারের সংশোধনীতে ড্যাপের আওতাধীন এলাকার কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অনুমোদন নিয়ে কৃষিজমিতে পোলট্রি, গবাদিপশুর খাবার, ফিশারিজ ইত্যাদির জন্য অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে। এত দিন কৃষিজমিতে মুদিদোকান, ফার্মেসি, সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয় করা যেত। অনুমোদন নিয়ে আরও কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির স্থাপনা করার সুযোগ ছিল। এখন থেকে সেগুলো আর থাকছে না।

১৪ ডিসেম্বর ড্যাপ সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মতো ড্যাপ সংশোধিত হলো। ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে ২০২২-৩৫ সালের জন্য করা মহাপরিকল্পনাটি ২০২২ সালের আগস্টে কার্যকর করা হয়। ড্যাপ হচ্ছে ঢাকা মহানগরের একটি সমন্বিত ও সামগ্রিক ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা। সহজ ভাষায় বললে, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কীভাবে হবে, তা এই দলিলের আলোকেই ঠিক হবে।

ড্যাপ প্রণীত হওয়ার পর থেকেই আবাসন ব্যবসায়ীরা তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে এক দফা সংশোধন করে সরকার। তাতেও সন্তুষ্ট হতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডিসেম্বরে বাস্তবায়ন-তদারকি ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধনী সুপারিশ প্রণয়নসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে দেয় সরকার। সেই কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশেই শেষ পর্যন্ত ড্যাপে বেশ কিছু সংশোধনী এসেছে।

সংশোধনীতে দেখা যায়, ড্যাপ সংশোধনের মাধ্যমে ২০ ফুট বা এর বেশি প্রশস্ত সড়কের পাশের আবাসিক ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর বা ফার) বাড়ানো হয়েছে। যেমন এত দিন ৬ মিটার বা প্রায় ২০ ফুট প্রশস্ত সড়কের ফার ছিল ২ দশমিক ৭৫। এখন সেটি বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৫ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৯ মিটার ৩০ ফুট প্রশস্ত সড়কের ফার ৩ দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ করা হয়েছে।

একইভাবে ৬৮টি জনঘনত্ব ব্লকের মধ্যে পুরান ঢাকা, মগবাজার, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, আফতাবনগর-বনশ্রী, রাজাবাজার, শুক্রাবাদ, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় এলাকাভিত্তিক ফার বাড়ানো হয়েছে। এতে অভিজাত এলাকার সঙ্গে এসব এলাকার ভবনের আয়তন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বৈষম্য কমবে।

এদিকে এলাকাভেদে আবাসন ইউনিটের হার মূল ড্যাপ থেকে সামান্য বাড়ানো হয়েছে। এতে কয়েকটি এলাকায় ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়বে। যেমন মূল ড্যাপে পুরান ঢাকায় আবাসন ইউনিটের হার ছিল ১ দশমিক ২। সেটি বাড়িয়ে দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২ দশমিক ৪ করা হয়েছে। এর মানে পুরান ঢাকায় ৫ কাঠা জমিতে ৬টির পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১২টি ফ্ল্যাট করা যাবে।