যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে কেনা হচ্ছে চার কার্গো এলএনজি

আমদানি করা এলএনজিবাহী জাহাজ।ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুর থেকে চার কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে তিন কার্গো আনা হচ্ছে সিঙ্গাপুর থেকে, আর এক কার্গো আনা হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চার কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে মোট ২ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

সিঙ্গাপুরের তিন কার্গোর মধ্যে দুই কার্গো আমদানি করা হচ্ছে ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামের কোম্পানি থেকে, আর এক কার্গো আনা হচ্ছে গানভোর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটির নাম এক্সিলারেট এনার্জি এলপি। এক কার্গোতে এলএনজি থাকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। মেট্রিক মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট অর্থাৎ ১০ লাখ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটে ১ এমএমবিটিইউ।

সরকারি ক্রয়–সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি আজ বুধবার জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এলএনজি আমদানির এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ৪৬৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা ও আরেক কার্গো আনতে ৫০৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আর গানভর সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি এলপি থেকে এক কার্গো আমদানিতে ব্যয় হবে ৫১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

জ্বালানি হিসেবে দিন দিন এলএনজির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এলএনজি হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের তরল রূপ। সংরক্ষণ ও পরিবহনের সুবিধার্থে অস্থায়ীভাবে এটিকে তরলে রূপান্তর করা হয়। প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলীকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এ তরল প্রাকৃতিক গ্যাসই হচ্ছে এলএনজি।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও জাপানসহ এশিয়ার অনেক দেশ অন্তত ৭০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা মেটায় এলএনজির মাধ্যমে। বাংলাদেশও সেই পথে এগোচ্ছে। দেশে এখন প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি কিউবিক ফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। তাই সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন বা ৩৫০ কোটি কিউবিক ফুট গ্যাসের চাহিদা এলএনজির মাধ্যমে মেটাতে চায়।

ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরের বাইরে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে সুইজারল্যান্ড ও জাপান থেকে। চলতি বছরের আগে পেট্রোবাংলা খোলাবাজার থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল গত বছরের মে মাসে। তখন প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ছিল ২৬ ডলার ৪ সেন্ট। সে অনুযাযী প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম অর্ধেকেরও বেশি কমেছে।

দেশে গ্যাস–সংকট বিবেচনায় ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৯ সালে সরকার একটি পরিকল্পনাও নেয়। তার অংশ হিসেবে ২০২১ সালে জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ের চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়।

রাশিয়াও বাংলাদেশে এলএনজি রপ্তানি করতে চায়। যৌথভাবে দেশটি এলএনজি টার্মিনালও স্থাপন করতে চায় এদেশে। গত ১৩-১৫ মার্চ বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা–সংক্রান্ত রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তসরকার কমিশনের চতুর্থ অধিবেশনে রাশিয়া এমন আগ্রহ দেখায়। যদিও এ ব্যাপারে আলোচনা বেশি দূর এগোয়নি।

নির্বাচন কমিশনের জন্য স্মার্ট কার্ড
এদিকে ক্রয় কমিটির বৈঠকে আজ নির্বাচন কমিশনের জন্য তিন কোটি ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে এ স্মার্ট কার্ড কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের ‘আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিসেস (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ স্মার্ট কার্ড কেনা হবে বলে জানা গেছে।