আগে যাঁরা টাকা পাচার করতেন, তাঁরা এখন নিজেরাই পাচার হয়েছেন: জাহিদ হোসেন

জাহিদ হোসেন

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আগে যাঁরা টাকা পাচার করতেন, তাঁরা এখন নিজেরাই পাচার হয়ে গেছেন। আর যাঁরা দেশে আছেন, তাঁরা ক্ষমতার সঙ্গে সংযোগ করতে পারছেন না। সার্বিকভাবে টাকার পাচার কমেছে।

আজ বুধবার ‘অর্থনীতি কি দুষ্টচক্রের ফাঁদে’ শীর্ষক সেমিনারে জাহিদ হোসেন এ কথা বলেন। কারওয়ান বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভয়েস ফর রিফর্ম এবং ব্রেইন এ সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শক জ্যোতি রহমান একটি উপস্থাপনা দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৪৫০ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে তা ৭১৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আর ২০৩৫ সালে তা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হবে। এ জন্য আগামী এক দশকজুড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন আরও বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে আছে। মূল্যস্ফীতি উচ্চ হারে এক অঙ্কের ঘরে আছে। এ অবস্থায় বলা যায়, বাংলাদেশ একটি দুষ্টচক্রের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাঁর মতে, ‘অর্থনীতি শক্ত অবস্থায় আছে নাকি চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আছে, এটি নির্ভর করে রাজনীতির ওপর। রাজনীতি অস্থির থাকলে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির কথা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। আমরা এখন একটি রাজনৈতিক উত্তরণের মধ্যে আছি।’

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘যদি মসৃণ রাজনৈতিক উত্তরণ হয়, তাহলে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে যেতে পারব। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে না। তাই বাংলাদেশের ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি উচ্চাভিলাষী মনে হয়।’

অনেক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবগুলোতে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া যত ভালো প্রস্তাব দেওয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়
ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, নতুন সরকারকে অর্থনীতির কৌশল ঠিক করতে হবে। বিগত সরকার দেশের আর্থিক খাত দেউলিয়া করে গেছে।

মনজুর হোসেন বলেন, বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নতুন বিনিয়োগ মোটেও হচ্ছে না। যা হচ্ছে পুনর্বিনিয়োগ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে।

‘অনেক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবগুলোতে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে’—এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, পরবর্তী সরকার এসে এসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবে। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া যত ভালো প্রস্তাব দেওয়া হোক না কেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, মূল্যস্ফীতি ও মজুরি হারের পার্থক্যের কারণে শ্রমজীবী মানুষের শ্বাস রোধ হয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন দরিদ্র তৈরি হচ্ছে। শিল্প খাতে উৎপাদন বাড়লেও কর্মসংস্থান বাড়ছে না। তিনি বলেন, অরাজক রাজস্বব্যবস্থার অবসান করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জনস্বার্থ খাতগুলোতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সরকারের খরচে সুদ ব্যয়ের বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে ভবিষ্যতে খরচের বিষয়টি সংকুচিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক শফিক রহমান।